অবরুদ্ধ পরিবারকে উদ্ধার করতে গিয়ে ইউএনও নিজেই অবরুদ্ধ হলেন

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় অবরুদ্ধ একটি পরিবারকে উদ্ধার করতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান অবরুদ্ধ হয়েছেন। স্থানীয় কিছু লোকজন দা ও বল্লম নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেছেন। এমন অভিযোগে ১১ ব্যক্তিকে আসামি করে ভৈরব থানায় গতকাল সোমবার একটি মামলা হয়েছে। ভৈরব পৌর ভূমি কার্যালয়ের নায়েব হেলিম সরকার বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের গাজিরটেক গ্রামের সাজিদ মিয়া, জয়নাল মিয়া, আজিজ মিয়া, আরস মিয়াসহ কয়েকজনের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিষয়ে হুমায়ুন কবির নামের এক ব্যক্তির বিরোধ চলছিল। তাঁরা সবাই প্রতিবেশী। জমি নিয়ে গ্রামের অনেকের সঙ্গে হুমায়ুন বিরোধে জড়ান বলে অভিযোগ আছে। এ কারণে বেশির ভাগ প্রতিবেশী জমিসংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছেন। এ বিরোধের কারণে কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে হুমায়ুনের বাড়ির সামনে ইট দিয়ে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে। এতে হুমায়ুনের পরিবারের সদস্যদের স্বাভাবিক যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনায় হুমায়ুন কয়েক দিন আগে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর ইউএনও গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর প্রতিবেশী ওই ব্যক্তিদের প্রাচীর সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন ইউএনও। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি। তখন ইউএনও প্রাচীর ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। এতে ওই ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ হন এবং দা, লাঠি, বল্লম নিয়ে ইউএনওর ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এই সময় উপস্থিত কিছু লোকজন ইউএনওকে রক্ষা করেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও সেখানে আসেন।

ইউএনও মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ভূমি নিয়ে বিরোধ চলছে। তাতে কার দোষ বেশি, কিংবা কার দোষ কম, সেটি প্রমাণের বিষয়। তবে কেউ কোনো পরিবারকে এভাবে প্রাচীর নির্মাণ করে অবরুদ্ধ করে রাখতে পারে না। আমি কেবল পরিবারটিকে অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছিলাম। তখন প্রতিপক্ষের  দা, বল্লম নিয়ে আমার ওপর আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করে।’

যাঁর পরিবারকে অবরুদ্ধ দশা থেকে উদ্ধার করতে এসে ইউএনও অবরুদ্ধ হয়েছেন, সেই হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রতিপক্ষের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে আমার ওপর নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। একবার আমার ওপর হামলা চালায়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে। একবার চুরির অপবাদ দিয়ে জেলে পাঠায়। এবার বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।’

ইউএনওর ওপর হামলাচেষ্টার মামলার প্রধান আসামি হলেন গাজীরটেক গ্রামের সাজিদ মিয়া। তিনি বলেন, হুমায়ুন দুষ্ট প্রকৃতির লোক। নানাভাবে গ্রামে অশান্তি সৃষ্টি করা তাঁর নেশা। বিশেষ করে ভূমি নিয়ে বিরোধে জড়ানো পেশায় পরিণত হয়েছে। এ কারণে গ্রামবাসীর তাঁর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিয়েছে। ইউএনওর ওপর হামলাচেষ্টার বিষয়ে তাঁর ভাষ্য হলো, বিষয়টি ভুল–বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে।

ইউএনওকে অবরুদ্ধ করার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম। পরে তাঁর উপস্থিতিতে প্রাচীর ভেঙে পরিবারটির যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত করা হয়। ওসি বলেন, আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। তবে এখনো কাউকে ধরা যায়নি।