‘আজ গণিত পরীক্ষা ছিল, তবে হবে না—এটা জানতাম না। এসে দেখি, পরীক্ষা হচ্ছে না।’ আজ সোমবার সকালে খুলনা জিলা স্কুলের সামনে কথাগুলো বলছিল সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সরফুদ্দিন আয়ান। তার মতো খুলনার কয়েকটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের আরও অনেক শিক্ষার্থী একই সমস্যা পড়েছে। তারা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর শিক্ষকদের কর্মবিরতির খবর পেয়েছে। ফলে বার্ষিক পরীক্ষায় না বসে তাদের বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
সহকারী শিক্ষক পদটিকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করাসহ চার দফা দাবিতে খুলনাসহ দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে বিদ্যালয়গুলোতে আজ সোমবার থেকে পরীক্ষা বন্ধ আছে। বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে চলমান এ কর্মসূচি সম্পর্কে অনেক শিক্ষার্থী আগে থেকে জানতে না পারায় বিদ্যালয়ে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। এর আগে ২৪ নভেম্বর থেকে এসব বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়।
আজ সকালে খুলনা জিলা স্কুলের ভেতর নোটিশ বোর্ডে বারবার চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিল ইরফান রাইয়ান নামের আরেক শিক্ষার্থী। জানতে চাইলে সে বলে, ‘এখনো পরীক্ষার বিষয়ে কিছু জানি না। কোথাও লেখা আছে কি না তাই দেখছি। বাসায় ইন্টারনেটের লাইন নেই। তাই দেখতে পারিনি।’
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজীম ইসলাম আরা জানায়, ‘শুনেছিলাম পরীক্ষা হবে না। তবে শিওর হতে আসলাম। কনফিউশনে ছিলাম। স্যারেরা বলছেন, এই পরীক্ষা কবে হবে, তা নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেবেন।’
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুদীপ্ত সানার আজ ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ছিল। সে বলে, ‘পরীক্ষার মধ্যে তো অনলাইনে খেয়াল রাখা হয়নি। এখন চলে এসে দেখছি আজকের পরীক্ষা স্থগিত।’
জিলা স্কুলে পরীক্ষা দিতে আসা এসব শিক্ষার্থীকে স্থগিতের তথ্য জানাচ্ছিলেন এক শিক্ষক। তিনি বলেন, সরকার যদি তাঁদের দাবি পূরণ করে তাহলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো নিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
খুলনার সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভেতরে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায় যায়নি। বিদ্যালয়টির নোটিশ বোর্ডে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা আছে, অনিবার্য কারণবশত পয়লা ডিসেম্বরের বার্ষিক ও নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। পরীক্ষার তারিখ পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
মাধ্যমিক শিক্ষকদের চারটি দাবি হলো—সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ এর গেজেট প্রকাশ; বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা; সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া; ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২-৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।