বোরহানউদ্দিনে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশের আগে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মিছিল। ছবিটি ভোলা–চরফ্যাশন মহাসড়কের বাংলাবাজার এলাকা থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ছাত্রদল সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার মৃত্যু, জ্বালানি তেল ও দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশটি হওয়ার কথা ছিল। তবে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বোরহানউদ্দিনের দিকে যাওয়ার পথে ভোলা শহরের যুগীরঘোলা এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও ভোলা-২ আসনের (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিমের গাড়িবহর আটকে দেয় পুলিশ। পরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, গত ৩১ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। সেদিন বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছিলেন। মর্মান্তিক সে ঘটনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর দাবিতে সারা দেশের মতো আজ বোরহানউদ্দিন উপজেলায়ও সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। ঢাকা থেকে এসে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বোরহানউদ্দিন যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু পুলিশ একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে নিয়ে তাঁদের পথ রোধ করে।

হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, ‘পুলিশ বলেছে, আমরা বোরহান উদ্দিনে গেলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে। আমরা বলেছি, আপনারাও চলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে চলে আসবে। পুলিশ সেটা না মেনে আমাদের পথ রোধ করেছে।’

ভোলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন বিএনপিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোনো সমাবেশের অনুমতি দেননি। সেখানে অন্যান্য সংগঠনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় বিএনপির বহরকে যুগীরঘোলে বাধা দেওয়া হয়েছে।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম অভিযোগ করেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় গতকাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মারধরে তাঁদের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

বিএনপি নেতার করা অভিযোগটি নাকচ করে দিয়েছেন বোরহানউদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, আগস্ট শোকের মাস। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী এ মাসে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অভাব নেই। গত দুই দিন তাঁদের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা মাঠে নেই। তাঁদের ওপর হামলার প্রশ্নই ওঠে না। তারপরেও তাঁর অজান্তে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সেগুলো তাঁর জানা নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে বোরহানউদ্দিন উপজেলার প্রবেশপথ বাংলাবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁদের বিএনপি–বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সড়কে ঝটিকা মিছিল বের করে দ্রুত সরে যাচ্ছেন।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. নিরুদ্দিন চৌধুরীকে (২৫) কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। তিনি বর্তমানে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুজন কর্মী তাঁর ওপর হামলা করেছেন।

নিরুদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বোরহানউদ্দিনে আজকের বিক্ষোভ সমাবেশ উপলক্ষে তিনি বিএনপির স্থানীয় দুই নেতার সঙ্গে কথা বলে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় কাজীর হাট বাজার এলাকায় দুই ব্যক্তি তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। পরে লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।