সুন্দরবনঘেঁষা গ্রামটিতে নেই কোনো বিদ্যালয়

খুলনার কয়রা উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে শাকবাড়িয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের কোলে অবস্থিত দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রাম। গ্রামটির পরেই সুন্দরবন। উপকূলের গ্রামটিতে চার হাজার মানুষের বসবাস। যেখানে ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশু রয়েছে ৪ শতাধিক। কিন্তু গ্রামে কোনো স্কুল নেই।

এই গ্রামের পশ্চিমে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ বেদকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উত্তরে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। আশপাশে আরও দুটি স্কুল আছে। তবে তা আরও দূরে। এর মধ্যে আংটিহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রায় আট কিলোমিটার এবং জোড়শিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাতাখালী গ্রামে ২৬ বছর আগে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হলেও তা বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য গোলাম কিবরিয়া বলেন, ১৯৯৬ সালে পাতাখালী গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় দুজন শিক্ষানুরাগী ৩৩ শতাংশ জায়গা দান করেন। জায়গাটিতে একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে পাতাখালী কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়টি সরকারি না হওয়ায় ২০০৫ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে জরাজীর্ণ একটি ভবন থাকলেও কোনো শ্রেণি কার্যক্রম চলে না। জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে মাটিতে মিশে যাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।

ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, পাতাখালী গ্রাম থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব বেশি হওয়ায় শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। ফলে গ্রামটির শিশুরা একদিকে যেমন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে নিরক্ষরতা ও শিশুশ্রম বাড়ছে। এতে ওই গ্রামের শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকেরা। তাই গ্রামটিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

পাতাখালী গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করেছিলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা হায়দার মল্লিক ও ইয়াকুব মল্লিক। তাঁরা বলেন, নিজেদের জায়গাজমি কম, তারপরও গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ৩৩ শতাংশ জমি দান করেছিলেন। এরপর অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, তবে শুধু আশ্বাসই পেয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাঁরা এখন বৃদ্ধ। মৃত্যুর আগে এই গ্রামে একটি বিদ্যালয় দেখে যেতে চান শুধু।

পাতাখালী গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের জন্য খুবই সমস্যা হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের ৬-৭ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পাঠাতে সাহস পাই না। তাই সরকারিভাবে গ্রামটিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানাই।’

বন্ধ হয়ে যাওয়া পাতাখালী কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু মুছা তরফদার বলেন, পাতাখালী গ্রামেই ৫-১০ বছর বয়সী ৪ শতাধিক শিশু রয়েছে। তাদের অনেকেই নিকটবর্তী স্কুল না থাকায় পড়ালেখা করে না। গ্রামটিতে সরকারি উদ্যোগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হতো।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, পাতাখালী গ্রামে একটি স্কুল প্রয়োজন। যে প্রকল্পের আওতায় অনেক আগে একটি কমিউনিটি স্কুল ছিল, সেই প্রকল্প এখন বন্ধ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে যদি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা পাওয়া যায়, তাহলে সরকারিভাবে বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।