বন্ধুকে হত্যা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে, পরে কেঁদেকেটে বন্ধুর বাবাকে সান্ত্বনা

নিখোঁজের ১০ দিন পর স্বামীর লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে স্ত্রী ফরিদা খাতুন কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুই সন্তান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী মহানগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার মুন্সিপাড়া এলাকায়
ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহীতে বন্ধুকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে রেখে এসে সেই বন্ধুর বাবাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন অপর এক বন্ধু। নিহত বন্ধুর জন্য তিনি কান্নাও করেছেন। নিখোঁজের ১০ দিন পরে বুধবার দিবাগত রাতে পুলিশ সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আরিফুল হক চৌধুরী ওরফে রিপন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব বিষয় স্বীকার করেছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম মাহফুজুর হোসেন ওরফে সজল (৩৮)। তিনি রাজশাহী মহানগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার হড়গ্রাম মুন্সিপাড়া এলাকার মোহাম্মদ মর্তুজা হোসেনের ছেলে। মাহফুজুর দুই সন্তানের বাবা।

গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আরিফুল হক চৌধুরীর বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার আবদুলপুর গ্রামে। তিনি রাজশাহী নগরের শাহ্ মখদুম থানার সন্তোষপুর মহল্লার এক বাসায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন।

স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত মাহফুজুর হোসেন ও গ্রেপ্তার আসামি আরিফুল হক দুই বন্ধু। তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। নগরের নিউ মার্কেট এলাকায় তাঁদের মুঠোফোনের ব্যবসা ছিল। করোনার মধ্যে সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তবে মাহফুজুরের বাবা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে আরিফুলের কোনো ব্যবসা ছিল কি না, তাঁর জানা নেই। আরিফুলের একটা মুঠোফোনের ব্যবসা ছিল। এটাই তিনি জানতেন। ব্যবসায়িক বিরোধ থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

নিহত মাহফুজুর হোসেনের বাবা মোহাম্মদ মর্তুজা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আরিফুল হকের সঙ্গে তাঁর ছেলের কীভাবে বন্ধুত্ব হয়েছিল, তিনি তা জানেন না। এর আগে আরিফুল স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বাসায় এসেছেন, খেয়েছেন। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আরিফুল স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করেছেন। তাঁকে (মর্তুজাকে) সান্ত্বনা দিয়েছেন। ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় তিনি গত বুধবার নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ১ অক্টোবর তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে অপহরণকারীরা প্রথমে ১ কোটি এবং পরে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে।

নিহত মাহফুজুর হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ জানায়, জিডির পর নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানা-পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারে, মুক্তিপণ দাবি করা ব্যক্তির অবস্থান আরিফুল হকের ভাড়া বাসায়। এরপর আরিফুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন আরিফুল হক স্বীকার করেন, অপহরণের পর দিন ২ অক্টোবর মাহফুজুরকে হত্যা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, বুধবার দিবাগত রাতে কাশিয়াডাঙ্গা ও শাহ মখদুম থানা এবং ডিবি পুলিশ আরিফুল হককে নিয়ে তাঁর ভাড়া বাসায় অভিযানে যায়। সেখানে সেপটিক ট্যাংক থেকে মাহফুজুরে লাশ উদ্ধার করা হয়।

কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। কয়েকজন মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটনানো হয়েছে। এ ঘটনায় আরিফুলের বিরুদ্ধে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন নিহত মাহফুজুরের বাবা। সেই মামলায় আরিফুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নিহত মাহফুজুরের লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।