জয়পুরহাটে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা এমটিএফইর ‘সিইওর’ বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

সাইবার অপরাধ
প্রতীকী ছবি

জয়পুরহাটে অনলাইন অ্যাপ এমটিএফইতে মানুষকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে অনেক ধরনের তৎপরতা চালানো হয়েছে। শহরের নামীদামি হোটেল–রেস্তোরাঁয় সভা-সেমিনারের আয়োজন করে আকর্ষণীয় লাভের প্রলোভন দেখানো হতো। এসব অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও উপস্থিত থাকতেন। অফিস ভাড়া করেই চলত এই কার্যক্রম।

জয়পুরহাট পৌরশহরের ইরাকনগর এলাকার সাদ আলম চৌধুরী নামের এক তরুণ এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিতেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতারণার শিকার বিনিয়োগকারীরা। জয়পুরহাট সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী সাদ আলম চৌধুরী নিজেকে পরিচয় দিতেন এমটিএফইর জয়পুরহাটের সিইও। এমটিএফই অ্যাপে প্রতারণার ঘটনা জানাজানির পর তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।

প্রতারণার অভিযোগ এনে সাদ আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে জয়পুরহাট সদর থানায় একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। অ্যাপে প্রতারিত পাঁচ বিনিয়োগকারীর পক্ষে ইমন হোসেন নামের এক ব্যক্তি গত রোববার রাতে অভিযোগটি করেন। তবে অভিযোগটি অসম্পূর্ণ থাকায় সেটি আমলে নেয়নি পুলিশ। অভিযোগকারী ইমন হোসেন সদর উপজেলার দেওয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

আরও পড়ুন

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জয়পুরহাট শহরের ইরাকনগরের বাসিন্দা সাদ আলম চৌধুরী সবুজনগরে জাকস ফাউন্ডেশনের পাশে এমটিএফইর অফিস খোলেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সরাসরি সভা-সেমিনারে ডেকে নিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ার কেনার নামে ৬৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অফিস তালাবদ্ধ রয়েছে। সাদ আলম চৌধুরীও পলাতক। ওই অভিযোগে আরও চারজন প্রতারিত ভুক্তভোগী নাম রয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী ১০ থেকে ১২ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদ আলম চৌধুরীর সঙ্গে আরও ১২ জন সহযোগী রয়েছেন। তাঁরা জয়পুরহাট শহরের নামীদামি হোটেল-রেস্তোরাঁয় সভা-সেমিনার করে তাঁদের এমটিএফই অ্যাপে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেন। এসব সভা-সেমিনারে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা থাকতেন। এ কারণে তাঁরা আস্থা পেয়েছিলেন। এরপর বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রতারিত হবেন, তা কখনো ভাবেননি তাঁরা। লোকলজ্জায় তাঁরা কেউই প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন না।

ইমন হোসেন থানায় অভিযোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমার মতো অনেকেই এমটিএফই অ্যাপে প্রতারিত হয়েছেন। সাদ আলম চৌধুরী আমাকে অ্যাপে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।’

আরও পড়ুন

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ইরাকনগর মহল্লায় সাদ আলম চৌধুরীদের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মা রেজিয়া সুলতানা বলেন, সাদ পড়াশোনার পাশাপাশি আউট সোর্সিংয়ের কাজ করেন। এক সপ্তাহ আগে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ফোনও করেননি। তাঁর ছেলে কারও সঙ্গে প্রতারণা করেননি বলে তিনি দাবি করেন।

জয়পুরহাট সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম সরওয়ার বলেন, রোববার রাতে এক তরুণ এসে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি অভিযোগের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তার সপক্ষে প্রমাণ দরকার। তিনি সেটি দেননি। অভিযোগ দেওয়ার পর তিনি থানায়ও আর আসেননি।

জয়পুরহাটের সমাজকর্মী তিতাস মোস্তফা বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, অনলাইনভিত্তিক এমটিএফই অ্যাপটি জয়পুরহাট জেলা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অতীতে ডেসটিনি, আইটিসিএল, যুবক, ইভ্যালি থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। অতীত থেকে কেউ শিক্ষা নেননি বলে বারবার প্রতারিত হচ্ছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় এগুলো হয়। প্রশাসন যদি ব্যর্থতার পরিচয় দেয়, তাহলে এ রকম ঘটতেই থাকবে।

আরও পড়ুন