কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
শয্যাসংকটে মেঝেতে চিকিৎসা
পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলায় ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে শয্যাসংকট দেখা দিয়েছে। প্যাথলজি বিভাগ চালু না থাকায় স্বাস্থ্য পরীক্ষাও বন্ধ।
খুলনার কয়রা উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যার পুরোনো দোতলা ভবন ভেঙে ফেলায় শয্যাসংকট দেখা দিয়েছে। জায়গার অভাবে হাসপাতালের বারান্দা, মেঝেতে থাকতে দেওয়া হয়েছে রোগীদের। সেখানেও জায়গা না পেয়ে দূর থেকে আসা অনেক রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলা সদরে। জরুরি মুহূর্তে অনেক রোগীকে চরম ভোগান্তি পোহাতেও দেখা গেছে। এমন অবস্থা চলছে প্রায় এক বছর ধরে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি ভবন, একটি ৩১ শয্যা ও অন্যটি ১৯ শয্যাবিশিষ্ট। গত বছর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনুমতি নিয়ে তা ভেঙে ফেলা হয়।
পরে তিনতলা নতুন ভবন নির্মাণে স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর থেকে দরপত্র আহ্বান করা হলে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের দায়িত্ব পায়। কার্যাদেশ পাওয়ার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করেনি। ফলে এখানে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা চুক্তি মূল্যে এসএ-জেটি (জেভি) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশ পাওয়ার দিন থেকে ৯ মাসের মধ্যে চলতি বছরের জুলাইয়ে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো নির্মাণসামগ্রী এখানে নিয়ে আসেননি ঠিকাদার।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী আবদুল হাকিম জানান, কয়েক মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের লোকজন এসে ছোট একটি গর্ত খুঁড়ে চলে যায়। এর পর থেকে সেখানে আর কাউকে দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত সেভাবেই আছে।
গত শনিবার সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, ১৯ শয্যাবিশিষ্ট ভবনটিতে পুরুষ ও নারী রোগীদের পাশাপাশি রাখা হয়েছে। শয্যা না পেয়ে বেশির ভাগ রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা রয়েছেন বারান্দা ও মেঝেতে। এদিকে কক্ষসংকটের কারণে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ রয়েছে। বহির্বিভাগেও রোগীদের চাপ বেশি দেখা গেছে।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা কয়রা সদরের আমিরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক কয়েকটি পরীক্ষার কথা বলেছেন। হাসপাতালে এক্স–রে, ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র চালু না থাকায় বাইরে থেকে রোগীদেরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন ফরহাদ হোসেন জানান, তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে ভর্তি করার পর কিছুদিন দোতলার সিঁড়ির নিচে থাকতে হয়েছে। পরে বারান্দায় একটি শয্যা পেয়েছেন।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, রোগীদের দুর্ভোগের কথা ভেবে উপজেলা ও জেলা সমন্বয় সভায় ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনাগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরেছি। এ ছাড়া স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোথাও থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এদিকে শয্যা ও কক্ষসংকটে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে দাপ্তরিক কার্যক্রমেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজর রহমান জানান, কাজ শুরু করতে মৌখিক এবং দাপ্তরিকভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চেয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জিয়াউল আহসান টিটুর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।