জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষ ছেড়ে দিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ১৫ কর্মী। তাঁদের অভিযোগ, হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রত্যাশী নিহান নিবিড়ের হাতে মার খেয়ে গত ৩০ আগস্ট রাতে তাঁরা ২১১, ২১২, ২১৩ ও ২১৭ নম্বর কক্ষ ছেড়ে দিয়েছেন।
আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে মওলানা ভাসানী হলের দ্বিতীয় তলায় ওই চারটি কক্ষ ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কক্ষগুলোতে যেসব ছাত্রলীগের কর্মীরা থাকতেন, তাঁরা জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেছেন। ফাঁকা খাট এবং টেবিল অগোছালোভাবে পড়ে আছে। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৮ আগস্ট রাতে একটি অটোরিকশা বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগের দুই কর্মীর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা একজন মাথায় আঘাত পান। মোটরসাইকেলটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ওই দুই ছাত্রলীগ কর্মী তাঁদের হলের বন্ধুদের ডেকে অটোরিকশাটি আটক করে মওলানা ভাসানী হলের সামনে নিয়ে যান। তাঁরা চালকের কাছে চিকিৎসার ব্যয়ভার এবং মোটরসাইকেলের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পরে অটোরিকশার মালিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা মো. খাইরুল বিষয়টি মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগের নেতাদের জানান। এ ঘটনায় হলের তিন তলায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের রাজনৈতিক ব্লকে ডেকে নিয়ে কনিষ্ঠ কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন নিহান নিবিড়। একপর্যায়ে এক কনিষ্ঠ কর্মীকে মারধর করেন। মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগের ১৫ জন জুনিয়র কর্মী তাঁদের রাজনৈতিক কক্ষ ছেড়ে দেন। এর পর থেকে তাঁরা হলের কোনো কক্ষে ওঠেননি। কেউ ক্যাম্পাসের বাইরে থাকছেন, কেউ হলের অরাজনৈতিক বন্ধুদের সঙ্গে বিছানা ভাগাভাগি করে থাকছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ব্লক ছেড়ে আসা কয়েকজন কর্মী বলেন, ছোটখাটো কিছু হলেই জ্যেষ্ঠরা তাঁদের মারধর করেন। এর আগেও হলের এক নেতা তাঁদের একজনকে মারধর করেন, তখন তাঁরা রাজনৈতিক কক্ষ ছেড়ে দেন। এখন তাঁরা সবাই তৃতীয় বর্ষে পড়েন, এখনো যদি মারধর করে তাহলে রাজনীতি করে কী লাভ? তাই তাঁরা রাজনৈতিক ব্লক থেকে চলে গেছেন।
এ বিষয়ে মো. খাইরুল বলেন, ‘অটোরিকশাটি আমার না। ওই দিন অটোরিকশাচালকের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটলে চালক আমাকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন। তখন আমি ভাসানী হলে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বলি, একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, বিষয়টি মাফ করে দেওয়ার জন্য। এরপর আর কোনো কিছু জানি না।’
এদিকে একই হলের ৩৪৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন প্রাণিবিদ্যা ও রসায়ন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের চারজন শিক্ষার্থী। মাসখানেক আগে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী নিহান নিবিড়ের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কনিষ্ঠ কর্মীরা এসে তাঁদের কক্ষ ছাড়ার নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে তাঁরা কক্ষ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ওই কক্ষটি এখনো ফাঁকা পড়ে আছে।
কক্ষ ছাড়ার বিষয়ে ৩৪৯ নম্বর কক্ষের সাবেক বাসিন্দা আবু বকর রাশেদ বলেন, ‘আমাদের তখন ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। নিবিড় এসে জানাল, এই রুম তাদের লাগবে। এই রুম ছেড়ে দিতে তারা অন্য রুমে আমাদের সবাইকে শিফট করার ব্যবস্থা করে দেবে। পরীক্ষা চলার কারণে আমরা একটু সময় চাচ্ছিলাম। কিন্তু নিবিড়ের নেতৃত্বে জুনিয়ররা বারবার এসে হেনস্তা করছিল, রুম থেকে বের করার জন্য। পরে বাধ্য হয়ে রুমটি ছেড়ে দিয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে নিহান নিবিড় প্রথম আলোকে বলেন, ‘মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হলে অনেক সময় সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে মান-অভিমান হয়ে থাকে। হয়তো সেই অভিমান থেকে তারা রুম ছেড়ে দিয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।’
মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হোসাইন মোহাম্মদ সায়েম বলেন, হলে ছাত্রলীগ কাউকে মারধর করেছে, এমন তথ্য তাঁর জানা নেই। আর হলের রুম ফাঁকা থাকার বিষয়টি আগে জানতেন না। এক গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে জেনেছেন। দ্রুত গণরুম থেকে শিক্ষার্থীদের রুমগুলোতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।