দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ সাইফুলের, ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা

সাইফুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

সাইফুল ইসলামের বয়স যখন দুই বছর পাঁচ মাস, তখন তাঁর বাবা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে মা রিনা বেগমের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এরপর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে রিনা বেগম চলে যান নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ভিকুনীয় গ্রামে বাবার বাড়িতে। বাবা আক্কাস আলীর অভাব-অনটনের সংসারে রিনা ও তাঁর শিশুসন্তান আরও বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তবে মানুষের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্টে ছেলের পড়ালেখা চালিয়ে নেন মা।

দারিদ্র্য ও শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সেই সাইফুল এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে মেধা তালিকার ৭২তম হয়েছেন। তবে ভর্তি হওয়া, পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাওয়া ও থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন খরচ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন সাইফুল। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাতেও মেধা তালিকায় ১৫৪তম স্থান অর্জন করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

ছোটবেলা থেকেই সাইফুল ইসলাম লেখাপড়ায় ভালো ফল করে আসছেন। তিনি পূর্বধলার পূর্ব ভিকুনীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ভর্তি হন সাধুপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখানে অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পান। একই প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা শাখা থেকে ২০২১ সালের এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং ২০২৩ সালে পূর্বধলা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই তিনি পড়ালেখা অব্যাহত রেখেছেন।

সাইফুল ইসলাম বলেন, বাবা জামাল উদ্দিন কোনো খোঁজখবর নেন না। নানার অভাবের সংসারে থেকে মায়ের সঙ্গে তাঁকেও অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়েছে। দৈনিক মজুরি হিসাবে কখনো অন্যের খেতে ধান লাগানো, ধান কাটাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। খেয়ে না খেয়ে তিনি এ পর্যন্ত এসেছেন। ভালো জামা-কাপড়, জুতা, স্কুলব্যাগ তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো ছিল।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এ সাফল্যের জন্য স্কুল-কলেজের স্যারসহ অনেকের কাছেই আমি ঋণী। স্কুলের বেতন, টিউশন ফি কিছুই দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমার মায়ের কষ্ট, দারিদ্র্য, অসহায়ত্ব আমার পড়ালেখার অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকবার ভেঙে পড়েছিলাম, তবু পড়াশোনা ছাড়িনি। ধৈর্য আমার মূলশক্তি ছিল। উচ্চশিক্ষা নিয়ে আমি বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডার হতে চাই। শিক্ষকতা পেশা আমার কাছে সবচেয়ে সম্মানের মনে হয়। আমার মতো যাঁরা অসহায়, বড় হয়ে আমি তাঁদের পাশে থাকতে চাই।’

সাইফুলের মা রিনা বেগম বলেন, ‘আমি লেহাপড়া না করলেও মূল্য বুঝি। এই ছেলেডাই আমার সব। অভাবের কারণে তারে ভালো খাওয়া-খাদ্য, জামাকাপড় দিতে পারি নাই। কোনো প্রাইভেট কোচিংয়ে করাইতে পারি নাই। তবে সবাই আমার ছেলেডারে পছন্দ কইরা সাহায্য করছে। অহন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো, এইডা আমার আনন্দ। তবে খরচ চালানি নিয়া অনিশ্চয়তা মধ্যে আছি।’

পূর্বধলা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম অসম্ভব মেধাবী। দারিদ্র্যকে জয় করে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাকে দেখে অনেকেই অনুপ্রেরণা পাবে। কলেজের পক্ষ থেকে আমরা যতটুকু পেরেছি, তাকে সহযোগিতা করেছি। আশা করি, এখন সে শুধু সামনেই এগিয়ে যাবে। এটাই জীবনের আনন্দ।’