দেশজুড়ে মহেশখালীর মিষ্টি পানের কদর, বছরে সহস্রাধিক কোটি টাকা বিক্রি

কক্সবাজারের মহেশখালীর হোয়ানক এলাকার বরজ থেকে পান সংগ্রহ করছেন এক চাষি
ছবি: প্রথম আলো

আকারে ছোট হলেও স্বাদে অনন্য হওয়ায় সারা দেশেই রয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মিষ্টি পানের কদর। এবার উপজেলাটিতে পানের উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি পাওয়া যাচ্ছে ভালো দাম। এতে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মহেশখালীতে মিষ্টি পানের চাষ করেন প্রায় ২৭ হাজার ২০০ জন চাষি। ৪ হাজার একর জমিতে ছোট-বড় প্রায় ১২ হাজার বরজ রয়েছে। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বরজগুলোতে ৪৪ হাজার মেট্রিক টন মিষ্টি পান উৎপাদিত হয়েছে। এবার বিড়াপ্রতি দাম পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা। চাষিদের হিসাবে প্রতি মেট্রিক টনে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ বিড়া পর্যন্ত পান হয়। প্রতি বিড়ার (৮০টি) দাম ২৫০ টাকা ধরা হলে উৎপাদিত ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পান বিক্রি করে ১ হাজার ৩২০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে।

মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জাতে ভিন্নতা থাকায় দেশের অন্যান্য এলাকার পানের চেয়ে মহেশখালীর পান স্বাদে আলাদা। উপকূলীয় এলাকার মাটির গুণগত পার্থক্যের কারণে এই এলাকায় মিষ্টি পান হয়।

উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মাঝেরপাড়ায় ১০ শতক জমিতে একটি পানের বরজ করেন স্থানীয় চাষি মোহাম্মদ রিদুয়ান (৪৬)। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর বরজে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে বাঁশের বেড়া ও ওপরে শণের ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পানের বরজ। ভেতরে পানের লতা (গাছ) চিকন বাঁশের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। লতা থেকে পানপাতা বের হয়ে পুরো বরজ সবুজ রং ধারণ করেছে। বরজে ঢুকে পান কাটছেন মোহাম্মদ রিদুয়ান।

মোহাম্মদ রিদুয়ান বলেন, পানগুলো বাঁশের খাঁচায় ভরে দেড় কিলোমিটার দূরের জনতাবাজারে বিক্রি করেন তিনি। এবার ভালো দাম পাচ্ছেন।

একই এলাকায় ২০ শতক জমিতে পানের চাষ করেছেন মো. জমির উদ্দিন (৫৫)। তিনি বলেন, বরজে প্রতিদিন পানি দিতে হয়। তা ছাড়া সময়মতো খৈল, গোবর, টিএসপি ও এমওপি সার দিতে হয়েছে তাঁকে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মহেশখালীর সাড়ে ৩ হাজার একর পাহাড়ি জমিতে সারা বছর পান চাষ হয়। তবে সমতলের ৫০০ একর জমিতে চাষ হয় অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত। বর্ষায় সমতলে পানি জমলে বরজের ক্ষতি হয়।

কক্সবাজারের মহেশখালীর হোয়ানক বাজারে বিক্রির জন্য পান সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা ছবি
প্রথম আলো

প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও মঙ্গলবার উপজেলার গোরকঘাটা, নতুনবাজার, টাইম বাজার, পানিরছড়া, কালারমারছড়া, জনতাবাজার ও শাপলাপুর বাজারে পানের হাট বসে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা বাজারে এসে মিষ্টি পান কেনেন। তারপর ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। দেশের বাইরেও রপ্তানি হয় পান।

গত শুক্রবার চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে জনতাবাজারে পান কিনতে আসেন পাইকার মোহাম্মদ আলম। তিনি ২৭০ টাকা দরে ৩ হাজার ৫০০ বিড়া পান কেনেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছয় মাস আগেও তিনি পানের বিড়া কিনেছেন ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। তবে এখন দাম অনেক বেড়েছে। এরপরও মহেশখালীর পানের চাহিদা রয়েছে।
শাপলাপুর এলাকার চাষি সাজেদুল করিম বলেন, ১০ শতক জমিতে পানের বরজ করতে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। উৎপাদিত পান বিক্রি করে তিন লাখ টাকার বেশি আয় হবে তাঁর।

পান বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, বরজ থেকে পান সংগ্রহের পর দু-এক দিন ধরে রাখা যায়, নইলে পানে পচন ধরে। উপজেলায় পান সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় চাষিদের বিপাকে পড়তে হয়।

কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তারেক বিন ওচমান শরীফ বলেন, কৃষকদের খাসজমি ইজারার পাশাপাশি ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে মহেশখালীর  পানচাষিরা উৎসাহিত হবেন।

ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সৌরভ হোসেন বলেন, পানের চাষ বাড়াতে তাঁরা চাষিদের সব সময় উৎসাহিত করেন। তাঁদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও করা হয়।

সৌরভ হোসেন বলেন, সমুদ্র উপকূলের লবণাক্ত পরিবেশে মহেশখালীতে উৎপাদিত পান স্বাদে অনন্য। এটি সৌদি আরব, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।