ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস 

মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা তিনজনই আওয়ামী লীগের। নৌকা ছাড়া দুই স্বতন্ত্রের মধ্যে একজন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য।

রনজিত চন্দ্র সরকার, মোয়াজ্জেম হোসেন ও সেলিম আহমদ

সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই নৌকার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে নৌকাবঞ্চিত দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। এর মধ্যে দুটিতে দ্বিমুখী এবং অন্যটিতে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ত্রিমুখী লড়াই হবে সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর)।

সুনামগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী আছেন আটজন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা তিনজনই আওয়ামী লীগের। নৌকা ছাড়া দুই স্বতন্ত্রের মধ্যে একজন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। ‘ধনে-জনে’ বলবান তিন প্রার্থীই এখন জয়ের জন্য মরিয়া। ছোট ছোট পথসভা, বৈঠকের সঙ্গে বড় বড় জমায়েতের সভাও করছেন তাঁরা। তলেতলে টাকার ‘খেলাও’ আছে এখানে। তিন প্রার্থীকে ঘিরে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও বিভক্ত। এখন সময় ঘনিয়ে আসায় ভোটাররা নানা হিসাব-নিকাশ টানছেন। চার উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে প্রার্থীদের এলাকাভিত্তিক ভোটের আঞ্চলিকতার হিসাবও কষছেন অনেকে।

এ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন রনজিত সরকার। নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ও দলের আরেক নেতা সেলিম আহমদ।

রনজিত চন্দ্র সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য। ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগে উঠে আসা রনজিতের রাজনীতি সিলেট নগরকেন্দ্রিক। তবে তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা রনজিত নির্বাচনী মাঠে সরব দীর্ঘদিন থেকে। তাঁর প্রচারণায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশাপাশি সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও অংশ নিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা রয়েছেন। 

এবার এখানে নৌকা পাননি এই আসনের ‘আলোচিত-সমালোচিত’ সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম। তবে মাঠ ছাড়েননি তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। দলের একসময় যাঁরা তাঁর সঙ্গী ছিলেন, নৌকা হারানোয় অনেকেই ছেড়ে গেছেন। তবে দীর্ঘ ১৫ বছরের ‘বিরোধ’ ভুলে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন জামালগঞ্জের বাসিন্দা সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার। তিনি নিজেও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার আগেও মোয়াজ্জেমের কড়া সমালোচনা করেছেন। এখন তাঁর পক্ষে মাঠে-ময়দানে বক্তব্য দিচ্ছেন। শামীমার কথা, বাইরের কোনো চাঁদাবাজ, মাস্তানকে চান না তাঁরা। বুধবার বিকেলে তাহিরপুরের এক নির্বাচনী পথসভায় মোয়াজ্জেমের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছে আমাকে মোয়াজ্জেম ভাই টাকা দিয়েছে। আমাকে টাকা দিয়ে কেউ কিনতে পারবে না। আমার যা আছে, তা ৫০ বছরেও শেষ হবে না।’

‘ধনে-জনে’ বলবান তিন প্রার্থীই এখন জয়ের জন্য মরিয়া। তলেতলে টাকার ‘খেলাও’ আছে এখানে।

মোয়াজ্জেমের সঙ্গে এখনো আছেন জামালগঞ্জের বাসিন্দা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক নবী হোসেন। মোয়াজ্জেমের সুবিধা, ১৫ বছরে তিনি নির্বাচনী এলাকার সবখানেই ‘নিজস্ব’ কিছু লোক সৃষ্টি করেছেন। তাঁর প্রতিপক্ষের লোকজন এটাকে বলেন ‘এমপি লীগ’। ধর্মপাশার বাসিন্দা মোয়াজ্জেম এখন যাকেই পারছেন, কাছে টানার চেষ্টা করছেন।

সেলিমও নির্বাচনী চিন্তা মাথায় রেখে মাঠে আছেন অনেক দিন থেকে। তাহিরপুর উপজেলায় তাঁর বাড়ি। জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন। পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়িয়েছেন তিনি। 

স্থানীয় লোকজন বলছেন, রনজিতের বড় শক্তি নৌকা ও দল। অন্যদিকে মোয়াজ্জেম তিনবারের টানা সংসদ সদস্য। নির্বাচনী এলাকার সব প্রান্তে তাঁর যোগাযোগ আছে। সেলিমও নানাভাবে দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় সক্রিয়। স্বতন্ত্র দুজনই আবার এলাকায় ‘টাকাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত। যে কারণে তিনজনই নির্বাচনী মাঠে শক্তিশালী। 

অন্য প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের নবাব সালেহ আহমদ, জাতীয় পার্টির আবদুল মান্নান তালুকদার, তৃণমূল বিএনপির মো. আশরাফ আলী, গণফ্রন্টের মো. জাহানুর রশিদ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. হারিছ মিয়া।