‘ভ্যান না বাইর করলে বউ-বাচ্চাক খাওয়ামো কী’
তীব্র তাপপ্রবাহ। তখন বুধবার দুপুর সোয়া ১২টা। মাথার ওপরে আগুনঝরা রোদ। আর নিচে পিচঢালা পথের তপ্ত আঁচ। অভাবের সংসারে চারজনের পেটে দুমুঠো ভাত দিতে এবং ঋণের ঘানি হালকা করতে মাথায় বেঁধেছেন গামছা। আর শক্ত হাতে ভ্যানের হাতল ধরে রাস্তায় নেমেছেন আবদুল মজিদ (৬৭)।
বুধবার দুপুরে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের ঢাকা মোড়ে ভ্যানে করে যাত্রী বহনের সময় কথা হয় ভ্যানচালক আবদুল মজিদের সঙ্গে। মে দিবসে ভ্যান চালাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মজিদ বলেন, ‘ভ্যান না বাইর করলে বউ-বাচ্চাক খাওয়ামো কী? ভ্যান না চললে হামার এনজিওর কিস্তি বাকি থাকে, হামার কি আর মে দিবস আছে?’
আবদুল মজিদের বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর গ্রামে। দুপুরে নবাবগঞ্জ উপজেলার ব্যাপারীটোলা বাজার থেকে তিনজন যাত্রী নিয়ে বিরামপুর পৌর শহরে আসেন তিনি। আবদুল মজিদ বলেন, ‘সপ্তাহ পার হলেই ৮০০ টাকা কিস্তি শোধ দিবার নাগে। ভ্যান চলালে ডেইলি ৩০০ থেকে ৪০০ ট্যাকা কামাই হয়। ওই ট্যাকা দিয়েই সংসারের তনে খরচ করো।’
দিনাজপুর জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের বিরামপুর উপজেলা স্ট্যান্ড কমিটির সম্পাদক মুকুল সরকার প্রথম আলোকে বলেন,‘মে দিবসের পেছনে অনেক শ্রমিকের ত্যাগ ও আত্মাহুতি জড়িত। এর পেছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। আজকের যান্ত্রিক জীবনে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে মে দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তৃণমূল পর্যায়ের শ্রমিকদের জানানো বা সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয় না। এতে যেসব খেটে খাওয়া মানুষ দুমুঠো ডালভাতের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন, তাঁদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে তেমন কিছু করার থাকে না।’