বান্ধবীর অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা মাসুদ রানার শেষ ছবি।
সংগৃহীত

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গত রোববার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন বরিশালের সাংবাদিক মাসুদ রানা (২৮)। লিখেছিলেন, ‘২০২৩ সালের প্রথম ছবি।’ ঘন কুয়াশায় মুখভার প্রকৃতির মধ্যে তাঁর মুখ ছিল হাসিমাখা। কে জানত, এটাই ছিল তাঁর শেষ ছবি। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মাসুদ রানা নিহত হওয়ার পর সে ছবি দেখে তাঁর বন্ধুদের আক্ষেপ যেন থামছেই না।

বন্ধুরা বলেন, মাসুদ সব সময় তাঁদের প্রয়োজনে এগিয়ে এসেছেন। তাঁর জীবনও অন্যের সহায়তা করতে গিয়ে চলে গেল। বান্ধবী লুৎফুন্নাহার লিমার অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে প্রাণ গেল তাঁর।

মাসুদ রানা ‘দৈনিক নবচেতনা’ নামের একটি পত্রিকার বরিশাল প্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাসাইল গ্রামে। তিনি বরিশাল নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় বসবাস করতেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকার বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজন বলেন, গতকাল সোমবার রাতে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই স্ত্রী মালা আক্তার নির্বাক হয়ে যান। আজ খুব সকালে তাঁকে স্বজনেরা শরীয়তপুরে নিয়ে যান।

আরও পড়ুন

মাসুদ রানার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা জানান, মাসুদ রানার বান্ধবী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী লুৎফুন্নাহার লিমার মা জাহানারা বেগম অসুস্থ ছিলেন। লিমার বাবা লতিফ মল্লিক যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। বাবার সঙ্গে লিমা সেখানে থাকেন। তাঁর মা জাহানারা বেগম বরিশাল নগরের কলেজ অ্যাভিনিউ এলাকায় বসবাস করতেন। ছয়–সাত মাস পরপর লিমা দেশে আসতেন ও মায়ের চিকিৎসা করাতেন। গতকাল রাতে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় লিমা তাঁর বন্ধু মাসুদ রানাকে তাঁদের সঙ্গে যেতে অনুরোধ করলে তিনি রাজি হন। দিবাগত রাত দুইটার দিকে তাঁরা একটি অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।

ভোররাত পৌনে চারটার দিকে জাজিরায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার কাছে গতিনিরোধক পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে ঢুকে দুমড়েমুচড়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্সের ছয় যাত্রী নিহত হন। তাঁরা হলেন জাহানারা বেগম (৫৫), লুৎফুন্নাহার লিমা (৩০), তাঁদের স্বজন ফজলে রাব্বি (২৮) এবং চালক রবিউল ও রবিউলের সহকারী জিলানি (২৮) ও মাসুদ রানা (২৮)।

আরও পড়ুন

বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস বলেন, মাসুদ রানার মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো নয়। গতকাল রাত ১০টার দিকেও রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এসে অনেকক্ষণ ছিলেন তিনি। মাসুদ পরোপকারী ছিলেন। সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর বরিশালে পৌঁছানোর পর সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। মাসুদ রানার গ্রামে মা-বাবা আছেন। তাঁরা দুই ভাই ও এক বোন। মাসুদই সবার ছোট। তাঁর গ্রামের বাড়িতে লাশ আনা হচ্ছে। সেখানে জানাজা শেষে দাফন হবে।