রিটার্নিং কর্মকর্তা বললেন, ‘অদম্য’ হিরো আলম, অভিনন্দন

প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর আজ বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হিরো আলম।
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম ‘একতারা’ প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। আজ বুধবার বেলা দুইটার দিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম তাঁকে একতারা প্রতীক বরাদ্দ দেন।

প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র এই প্রার্থীকে ‘অদম্য’ হিরো আলম বলে মন্তব্য করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার আগে হিরো আলমের উদ্দেশে বলেন, ‘অদম্য হিরো আলম। কনগ্র্যাচুলেশন (অভিনন্দন)। আপনার জন্য শুভকামনা থাকল। আপনার স্পিরিট (মানসিক শক্তি) দেখে অনেকেই উজ্জীবিত হবে।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাচ্ছি। আচরণবিধি মেনে আজ বুধবার থেকে প্রচারণা শুরু করতে পারবেন। আচরণবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য দুই আসনে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। সবার সহযোগিতায় আমরা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’

প্রতীক পেয়ে হিরো আলম বলেন, ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসন থেকে “সিংহ” প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। এ কারণে এবারও প্রথমে সিংহ চেয়েছিলাম। কিন্তু সিংহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নামে বরাদ্দ দেওয়া প্রতীক। এ কারণে পরে একতারা প্রতীক বেছে নিয়েছি।’

প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর হিরো আলম ভোটে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘গতবার ভোটের দিনে আমার ওপর হামলা হয়েছিল। সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় ভোট বর্জন করতে বাধ্য হয়েছিলাম।’

বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় রিটার্নিং কর্মকর্তাকে হিরো আলম বলেন, ‘হামার দিকে একটু দেকবেন। নির্বাচনত যেন কোন গন্ডগোল না হয়। সগলির দোয়া ও ভালোবাসা চাই।’
গতবারের হামলার বিষয়ে হিরো আলম বলেন, ‘এবার কর্মীরা অনেক সুসংগঠিত। কেউ আঘাত করলে আমরা পাল্টা আঘাত করতে বাধ্য হব। তা ছাড়া এবার মাত্র ছয় আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। আসন যেহেতু কম, আশা করব, এবার সংঘর্ষ হবে না। ভোটাররা যাতে অবাধে ভোট দিতে আসতে পারেন, এ জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। নির্বাচনে গেলে বাধা আসবেই। তবে সেই বাধা পেয়ে আমরা থেমে যাব না।’

একতারা প্রতীক পাওয়ার বিষয়ে হিরো আলম বলেন, ‘একতারা দেশ, মাটি ও মানুষের কথা বলে। আমি যেহেতু শিল্পী, সে কারণে একতারা নিয়েছি। হাতে সময় খুব কম। সব ভোটারের কাছে পৌঁছা জুলুম হবে। প্রার্থিতা বাতিল করার কারণে প্রচারণায় ১০ দিন পিছিয়ে পড়েছি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে দুই আসনেই প্রচারণায় নামব। চেষ্টা চালাব সবার কাছে পৌঁছার।’

নির্বাচন নিয়ে গান করবেন কি না, জানতে চাইলে জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় অনেক চমক থাকবে। হিরো-হিরোইন প্রচারণায়ও আসতে পারেন। একতারা নিয়ে নির্বাচনী গান করব।’

আরও পড়ুন

দলীয় সিদ্ধান্তের কথা বলে বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের বিএনপি দলীয় দুই সংসদ সদস্য গত ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। এরপর নির্বাচন কমিশন আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করে। ১৮ ডিসেম্বর উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আসন দুটিতে ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে।

বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগে শূন্য ঘোষিত বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন হিরো আলম। কিন্তু ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের তালিকায় গরমিল থাকার অভিযোগে প্রথমে রিটার্নিং কর্মকর্তা, পরে নির্বাচন কমিশন থেকে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন হিরো আলম। তিনি হাইকোর্টে রিট করে গতকাল মঙ্গলবার প্রার্থিতা ফিরে পান।

হিরো আলমের করা পৃথক রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মনোনয়নপত্র গ্রহণ এবং তাঁকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে (জেলা প্রশাসক) নির্দেশ দেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে তিনি ওই দিন ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। পরে ঘোষিত ফলে দেখা যায়, সিংহ প্রতীকে ভোট পড়েছে ৬৩৮টি।