বরিশালে জাপা চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ ২৮০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মামলা
প্রতীকী ছবি

গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানোর অভিযোগে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু)–সহ ২৮০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গণ অধিকার পরিষদের বরিশাল মহানগর কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আজ রোববার সকালে বরিশালের কোতোয়ালি থানায় এই মামলা করেন।

আরও পড়ুন

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাইদুল ইসলাম, রুহুল আমিন হাওলাদার, রত্মা আমিন, হাফিজ আহম্মেদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী, এ কে এম সেলিম ওসমান, আশরাফুজ্জামান, মোস্তাফিজুর রহমানসহ নামধারী ৩০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ওসি মিজানুর রহমান জানান, শনিবার বিকেলে জাতীয় পার্টির একটি বিক্ষোভ মিছিলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলার অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল শনিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হল চত্বরে ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছিল। বিকেলে ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন নেতারা নগরের ফকিরবাড়ি রোডে চা পান করছিলেন। এ সময় জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কার্যালয় থেকে নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলে প্রধান উপদেষ্টাসহ গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের কটূক্তিমূলক এবং সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের সরকারবিরোধী স্লোগান না দিতে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা। এ সময় জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে রামদা, দা, চাপাতি, পিস্তল, লোহার রড, বাঁশ, ইট নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা চালায়।

বাদীরা জানান, হামলায় বরিশাল জেলা গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি এইচ এম শামীম রেজা, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম হাসান, মহানগর গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন তালুকদার, যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মিরাজুল ইসলাম, মহানগর গণ অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ ফরাজী, সদর উপজেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি কে এম মাইনুলসহ গণ অধিকার পরিষদের ১৫ থেকে ২০ জন নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া আরও অনেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পুলিশের সহায়তায় আহতদের চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তবে জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুরের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। এ সময় ওই মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে জাপার অন্তত ছয় নেতা-কর্মী আহত হন। এ সময় পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জাপার নেতা-কর্মীরা। তাঁরা হামলাকারীদের মধ্য থেকে এক যুবককে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরের ফকিরবাড়ি সড়কে বরিশাল জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা চালান একদল ব্যক্তি। এ সময় তাঁরা কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করেন। এমনকি দলীয় সাইনবোর্ডে ভাঙচুর চালান।

জাপার সংবাদ সম্মেলন

রোববার বেলা আড়াইটার দিকে বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে বরিশাল নগর জাপার আহ্বায়ক মহসিন উল ইসলাম বলেন, ‘একদল টোকাই শ্রেণির যুবক তাঁদের মিছিলে হামলা ও অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে। এতে তাঁদের দলের ছয়জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। মতাদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম, তাহলে কেন আমাদের ওপর হামলা হলো? প্রশাসনের কাছে আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছি।’

হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মহসিন উল ইসলাম। পাশাপাশি হামলার ঘটনায় জাতীয় পার্টি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মহসিন উল ইসলাম বলেন, শনিবার জাতীয় পার্টির মিছিলে হামলা ও পরে রাতে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা জড়িত।