একমাত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল, আপিল খারিজ হলে পুনঃ তফসিল

মুন্সিগঞ্জ জেলার মানচিত্র

ঋণখেলাপির কারণে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের পর তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক বরাবর তিনি এ আবেদন করেন। আগামী রোববার আপিলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

তবে আপিলে ওই প্রার্থী প্রার্থিতা ফিরে না পেলে পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে আবারও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানান নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এর আগে গত বুধবার বেলা দুইটার দিকে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূবালী ব্যাংকের মুন্সিগঞ্জ শাখায় আনিছ উজ্জামানের ছেলে রাজনের নামে একটি ঋণখেলাপির তথ্য ছিল। সে ঋণের জামিনদার ছিলেন এই প্রার্থী। তাঁর ছেলে সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করায় আনিছ উজ্জামানকেও ঋণখেলাপি হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই তাঁর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরও দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।

আনিছ উজ্জামান সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সালের আপন চাচা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তফসিল অনুযায়ী ২২ এপ্রিলের আগে আনিছ উজ্জামানের আপিলের সুযোগ রয়েছে। যত দূর শুনেছি, বৃহস্পতিবার তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর আপিল করেছেন। আগামী রোববার সকালে আপিলের শুনানি হবে। শুনানিতে তিনি টিকে গেলে বৈধ প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। সে ক্ষেত্রে আনিছ উজ্জামান বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। এখানেও যদি তাঁর আপিল না টেকে, তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন। সেখানে তাঁকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে এ উপজেলায় শুধু ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। আর চেয়ারম্যান পদের জন্য নির্বাচন কমিশন পুনরায় তফসিল ঘোষণা করবে।’

আপিলের আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন।

তফসিল অনুযায়ী, সদর ও গজারিয়া উপজেলা নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ১৫ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৩ এপ্রিল। আগামী ৮ মে নির্বাচন হবে।

প্রার্থিতা অবৈধ হওয়ার বিষয়ে আনিছ উজ্জামান বলেন, ‘আমার ছেলের একটি ঋণের জামিনদার হয়েছিলাম। এ ঋণ পরিশোধ না হওয়ার বিষয়টি জানা ছিল না। গত মঙ্গলবার জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ ব্যাংকের সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করি। ঋণ পরিশোধের সব কাগজ আমরা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেছিলাম। তবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যের দোহাই দিয়ে আমার প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করেন। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লিখিত নিয়ে আসতে বলেন। আমি এ প্রসঙ্গে কথা বাড়াইনি। নির্বাচন কর্মকর্তা আমাকে ডিসি বরাবর আপিল আবেদন করতে বলেন। আমি নিয়ম মেনে আপিল আবেদন করেছি। আশা করছি, প্রার্থিতা ফিরে পাব।’

এদিকে এ উপজেলায় আনিছ উজ্জামানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা ছিল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ভূঁইয়ার। নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে পবিত্র রমজান মাসের শুরুতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করেন। বিভিন্ন এলাকায় তিনি গণসংযোগ ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। তবে ঈদের কয়েক দিন আগে অসুস্থতার জন্য তিনি প্রচার-প্রচারণা থেকে সরে যান। শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্রও জমা দেননি তিনি।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে ফয়সালের পক্ষে নির্বাচন করেছিলেন আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া। আনিছ উজ্জামানের ছেলেরা ফয়সালের বিপরীতে কাজ করেছিলেন। এ জন্য তাঁর চাচা আনিছ উজ্জামানকে রেখে আফসার উদ্দিনকে সমর্থন দেওয়ার কথা ছিল সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সালের। তবে শেষ পর্যন্ত পারিবারিক ও রাজনৈতিক নানা হিসাব–নিকাশে আফসার উদ্দিনের পাশ থেকে সরে দাঁড়ান ফয়সাল। সে জন্য আফসারও নির্বাচনে প্রার্থী হতে সাহস করেননি।

এ বিষয়ে আফসার উদ্দিন বলেন, ‘সদর উপজেলা নির্বাচনে সমর্থন দেওয়ার কথা বলে গত সংসদ নির্বাচনে আমার সমর্থন নিয়েছিলেন মোহাম্মদ ফয়সাল। উপজেলা নির্বাচনে আমাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য তিনি মদিনায় গিয়ে শপথ করেছিলেন। তিনি ওয়াদা ভঙ্গ করে পরিবারকে বেছে নিয়েছেন। আমাকেও নির্বাচন থেকে সরে যেতে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হয়েছে। তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। একক প্রার্থী হিসেবে আনিছ উজ্জামান মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এখন যদি তিনি নির্বাচন করতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে যাঁরা আমাকে প্রার্থী হতে দেননি, এ দায়ভার তাঁদেরই নিতে হবে।’