স্বামী-শাশুড়ির অনুরোধে বাড়ি ফেরার দেড় ঘণ্টা পর গৃহবধূর মৃত্যু, হত্যার অভিযোগ
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় বাড়ির সামনে ভ্যানের ওপর পড়ে থাকা এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার চর-শালনগর এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে ওই গৃহবধূর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছেন।
মৃত গৃহবধূর নাম জান্নাতি ইসলাম (১৮)। তিনি লোহাগড়া উপজেলার শালনগর গ্রামের সাজ্জাদ মিয়ার (৩০) স্ত্রী। জান্নাতির বাবার বাড়ি একই উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে। বাবার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে জান্নাতিকে হত্যা করেছে।
জান্নাতির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জুন মাসে পারিবারিকভাবে সাজ্জাদের সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতির। বিয়ের পর থেকেই সাজ্জাদ ও তাঁর পরিবার যৌতুকের দাবিতে জান্নাতিকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ শুরু করে। একপর্যায়ে পারিবারিক কলহের কারণে গত মাসের ৩০ তারিখে জান্নাতি তাঁর বাবার বাড়িতে ফিরে যান। এরপর তিন দিন পর সাজ্জাদ নিজেই শ্বশুরবাড়িতে এসে জান্নাতিকে ফেরত নিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে তাঁর বাবা-মায়ের উপস্থিতিতে জান্নাতি মারধরের শিকার হন। পরে জান্নাতির মা জামাইকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সাজ্জাদ ও তাঁর মা অনুরোধ করে জান্নাতিকে বাবার বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর বেলা দেড়টার দিকে সাজ্জাদের মুঠোফোন থেকে জান্নাতির বাবাকে জানানো হয় যে জান্নাতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং তাকে লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।
খবর পেয়ে জান্নাতির বাবা-মা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও অন্যান্য বেসরকারি ক্লিনিকে মেয়ের খোঁজ নেন। পরে স্থানীয় একজন ফোন করে জানান, সাজ্জাদের বাড়ির সামনের রাস্তার ওপর একটি অটোভ্যানে জান্নাতির মরদেহ পড়ে আছে। তবে সাজ্জাদের বাড়িতে তালা ঝুলছিল এবং পরিবারের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিল না। লোহাগড়া থানা-পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
সোমবার রাতে লোহাগড়া থানা চত্বরে জান্নাতির মা–বাবার সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, বিয়ের পর থেকেই সাজ্জাদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জান্নাতিকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করছিলেন। তাঁরা দাবি করেছেন, সাজ্জাদ ও তাঁর পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে তাঁদের মেয়েকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, মরদেহ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।