হাসি, গান ও আড্ডায় তাঁরা ফিরে গেলেন স্কুলজীবনে

পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়েছে। আজ রোববার পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে
ছবি: প্রথম আলো

মধ্য আষাঢ়ে ভ্যাপসা গরম আর হালকা রোদের দুপুর। পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়াম মুখর হয়ে ওঠে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নানা বয়সী প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণে। তাঁদের কেউ ব্যাংকার, কেউ গৃহিণী, কেউ প্রবাসী, কেউ গণমাধ্যমকর্মী, কেউ শিক্ষক আবার কেউ সরকারি চাকরিজীবী। কারও ১০ বছর, কারও ২০ বছর আবার কারও প্রায় ৫০ বছর পর একে অন্যের সঙ্গে দেখা। হাসি, গান ও আড্ডায় তাঁরা যেন ফিরে যান আবার সেই স্কুলজীবনে।

আজ রোববার পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অনলাইনভিত্তিক প্লাটফর্ম (সংগঠন) ‘প্রাক্তন বন্ধন’ দিনব্যাপী এ আয়োজন করে। পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় স্থাপিত হয় ১৯৫৬ সালে। এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ১৯৬৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬৪টি ব্যাচের ছাত্রীরা নিবন্ধন করেছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম প্রাক্তন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো এই মিলনমেলা।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জিন্নাতুন নাহার একজন ব্যাংকার। তিনি এখন সপরিবার ঢাকায় থাকেন। দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মিলনমেলায় অংশ নিতে। জিন্নাতুন নাহার বলেন, ‘১৯৯৫ সালের এসএসসির ব্যাচ ছিলাম আমরা। প্রায় ২৫ বছর পর বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ওদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে মনে হচ্ছে, নতুন করে স্কুলজীবনে ফিরে গেছি।’

জিন্নাতুনের কথা শেষ হতে না হতেই তাঁর বান্ধবী স্কুলশিক্ষক কনিকা আফরিন বলে উঠলেন, ‘এত দিন পর এমন একটা অনুষ্ঠান সত্যিই অনেক আনন্দের। সবাই তো চাকরি ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। এর মধ্যে এমন একটা দিন কিছুটা হলেও পুরোনো অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিল।’

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুরোনো কোনো বন্ধুকে দেখলেই জড়িয়ে ধরছেন। মুঠোফোনে সেলফি তুলে স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। কোনো কোনো আড্ডার স্থান থেকে ভেসে আসছিল নানান গানের সুর। অনুষ্ঠানে তাঁরা যেন ফিরে গিয়েছিলেন সেই ছোটবেলার সোনালি দিনগুলোতে।

এর আগে সকালে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় চত্বরে শুরু হয়েছিল মিলনমেলার প্রথম পর্ব। আলোচনা অনুষ্ঠানে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফতাবুর রহমান হেলালী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বেলুন ও পায়রা ওড়ানোর পাশাপাশি কেক কাটা হয়। পরে সেখান থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করে জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।

পরে স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান। এ ছাড়া পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন, মিলনমেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আফরোজা পারভীন বক্তব্য দেন। পরে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কবিতা আবৃত্তি, গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়।