নির্মাণের ৪০ বছর অতিবাহিত হলেও কোনো সংস্কার বা মেরামত না হওয়ায় ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে অফিসের অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। গরমের সময় ছাদ খুলে পড়ার আতঙ্কে বৈদ্যুতিক পাখা চালু করা যায় না।
মো. নজরুল ইসলাম, পোস্টমাস্টার, গাংনী উপজেলা

এ অবস্থায় গাংনী উপজেলা পোস্ট অফিসের এমন নাজুক অবস্থা ঐতিহ্যের প্রতি কেবল অবহেলাই না, গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের জীবনশঙ্কাতেও ফেলছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, পোস্ট অফিসের কর্মকর্তারাই গাংনী পোস্ট অফিসটির প্রতি নজর দিচ্ছেন না। এ কারণে একেবারে ভবনটি বেহাল হয়ে পড়েছে। অপরিষ্কারভাবে দীর্ঘদিন অবহেলায় থাকার কারণে আগাছা জন্মেছে। দেয়াল বেয়ে আগাছা উঠে গেছে ছাদে। দীর্ঘদিন পানি জমে জমে ছাদের অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে। কর্মকর্তারা শুধু নিজের বসার স্থানটি পরিষ্কার করেন। বাকি আর কোনো দিকে খেয়াল করেন না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে এসব ভবন সময়ের আগেই ধসে পড়ছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেহেরপুর জেলা পোস্ট অফিসের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি উপজেলা পোস্ট অফিসে বার্ষিক একটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই বরাদ্দ থেকে অফিসের সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো করা হয়ে থাকে। তবে কর্মকর্তাদের অনেকে বরাদ্দের টাকা খরচ করেন না। নিজেরাই খেয়ে ফেলেন।

সরেজমিন

গাংনী উপজেলার পোস্ট অফিসে ১১ মার্চ সরেজমিন দেখা যায়, শুধু ভবনের ভেতরের অংশই নয়, পুরো পোস্ট অফিস চত্বরের প্রতিটি স্থাপনাই নাজুক। নিরাপত্তাপ্রাচীরের অধিকাংশ জায়গা ভেঙে গেছে। ভবনের ছাদের মরিচা পড়া রড বের হয়ে গেছে। বিমগুলোতে ফাটল ধরেছে। প্রতিদিন এই ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্থানীয় লোকজন বলেন, সন্ধ্যার পর লোকজন না থাকায় অফিস চত্বরে মাদকসেবীদের আড্ডাও বসে।

গাংনী উপজেলা পোস্ট অফিসের কম্পিউটার অপারেটর মাহফুজুর রহমান বলেন, দিনে দিনে কার্যালয়ের বেশির ভাগ দেয়াল ও ছাদ নষ্ট হয়ে পড়েছে। অল্প বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এই ভবনে সরকারি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সরকারি বিমাপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। কম্পিউটারগুলো স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রাখার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ওই পোস্ট অফিসের ঝাড়ুদার শেফালি খাতুন বলেন, এই পোস্ট অফিসটি একসময় সারা দিন ব্যস্ত থাকত গ্রাহকদের আনাগোনায়। মানুষ সকাল-সন্ধ্যা নানান কাজে আসত এখানে। মানুষের আসা-যাওয়া কমে আসায় পোস্ট অফিসটি অনেকটা অনাদরে এমন অবস্থা হয়েছে। কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় জরাজীর্ণ রূপ নিয়েছে কার্যালয়। ছাদের ওপরে আগাছা জন্মেছে। বটগাছও বড় আকার ধারণ করেছে। ভবনটি সংস্কার করা গেলে আরও কয়েক বছর চলবে।

পোস্টম্যান হামিদুর রহমান বলেন, প্রতিটি সরকারি ভবনে সংস্কারের জন্য প্রতিবছরে একটি বরাদ্দ আসে। কিন্তু এই ভবনটি সংস্কারের জন্য কোনো বরাদ্দ আসে না। এটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে বলা হচ্ছে। তা–ও হচ্ছে না। এ কারণে আরও বেশি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

আছে জনবলসংকটও

গাংনী উপজেলার পোস্ট অফিসের পোস্টাল অপারেটর হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিটি উপজেলা পোস্ট অফিসে ১০ জন লোকবল থাকা আবশ্যক। অফিসে ১ জন উপজেলা পোস্ট মাস্টার, ২ জন পোস্টম্যান, ২ জন পোস্টাল অপারেটর, ১ জন মেইল ক্যারিয়ার, ১ জন নৈশপ্রহরী ও ১ জন ঝাড়ুদার থাকার দরকার। এখানে মাত্র ৫ জন লোকবল দিয়ে কার্যক্রম চলছে। তাঁরা হলেন একজন পোস্টমাস্টার, একজন পোস্টম্যান, একজন পোস্টাল অপারেটর, একজন নৈশপ্রহরী ও একজন ঝাড়ুদার।

বার্ষিক বরাদ্দের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগের ব্যাপারে গাংনী উপজেলা পোস্টমাস্টার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এ রকম কোনো বরাদ্দ তাঁদের অফিসের জন্য আসেনি। টাকা খেয়ে ফেলার অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে পোস্ট অফিসের ভবনটি নির্মিত হয়। নির্মাণের ৪০ বছর অতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত কোনো সংস্কার বা মেরামত না হওয়ায় ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ে অফিসের অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। গরমের সময় ছাদ খুলে পড়ার আতঙ্কে বৈদ্যুতিক পাখা চালু করা যায় না। ভবনটি কুষ্টিয়া পোস্ট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন ভবন শিগগিরই নির্মাণ শুরু হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া পোস্ট মাস্টার জেনারেল (ডিপিএমজি) মহসিন উদ্দিন বলেন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পোস্ট অফিস নতুন করে নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মেহেরপুর জেলা