চিংড়ি ধরার জন্য উপকূলীয় এলাকায় জনপ্রিয় ‘চাক জাল’

বর্ষা মৌসুমে খাল, বিল ও ধানখেতে পানি বাড়ায় মাছ ধরার জন্য চাঁই ও চাক জালের চাহিদা বেড়ে যায়। বুধবার দুপুরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌর শহরের বালুর মাঠে জালের হাটে
ছবি: প্রথম আলো

বর্ষা মৌসুমে গ্রামের ধানখেতে ও নালায় চিংড়ি ধরার জন্য উপকূলীয় এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চাক জাল। বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের বিকল্প হিসেবে সুতার তৈরি একধরনের মাছ ধরার ফাঁদ হলো চাক জাল। সুতা আর বাঁশের শলা দিয়ে তৈরি এই জাল চাকার মতো ঘোরানো যায় বলে এটির নাম হয়েছে চাক জাল। তবে দেখতে বুচনা চাঁইয়ের মতো হওয়ায় এটি বুচনা জাল নামেও পরিচিত।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া শহরের বালুর মাঠে সপ্তাহের প্রতি বুধবার চাক জালের হাট বসে। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন হাটবাজারে চাক জালের কেনাবেচা হয়। চাক জালের ব্যবসায়ী মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় হারজী গ্রামের নূর হোসেন বলেন, প্রতি হাটে ৪০০ থেকে ৫০০টি চাক জাল বিক্রি হয়। তবে এ বছর ধানখেতে চিংড়ির পরিমাণ কমে যাওয়ায় জাল বিক্রি কমে গেছে।

চাক জালের কারিগরেরা জানান, বৈশাখ মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ধানখেত ও নালায় চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ শিকার করেন জেলে ও কৃষকেরা। একসময় বাঁশের তৈরি চাঁই দিয়ে মাছ ধরা হতো। দুই দশক ধরে উপকূলীয় এলাকায় বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাঁইয়ের উৎপাদন ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। তা ছাড়া বাঁশের সংকটও রয়েছে। তাই জাল ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে চাঁইয়ের বিকল্প হিসেবে চাক জাল তৈরি শুরু করেন। চাক জাল তৈরিতে খরচ কম। বাঁশও কম লাগে। জাল তৈরির সুতা সহজলভ্য। তাই বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চাক জাল। হুবহু বুচনা চাঁইয়ের মতো। শুধু বাঁশের পরিবর্তে সুতার জাল ব্যবহার করে এই জাল তৈরি করা হয়। স্থানীয় কৃষকদের নিজস্ব মেধা ও শ্রম দিয়ে উদ্ভাবিত এ জালের উৎপাদন খরচ ও দাম কম হওয়ায় চাক জালের চাহিদা বেড়েছে। মঠবাড়িয়া উপজেলার মিঠাখালী, আন্ধারমানিক, ধানীসাফা গ্রামের অর্ধশত পরিবার চাক জাল তৈরি করে থাকে। এসব জাল গৃহস্থদের কাছ থেকে কিনে স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

হাটে কেনাবেচা হচ্ছে চাক জাল। বুধবার দুপুরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌর শহরের বালুর মাঠে জালের হাটে
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল বুধবার দুপুরে মঠবাড়িয়া উপজেলার শহরের বালুর মাঠে হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২০ জন জাল ব্যবসায়ী চাক জাল বিক্রি করছেন। কেউ কেউ জালগুলো ঝুলিয়ে বিক্রির জন্য বসে আছেন। বৃষ্টি হওয়ায় হাটে ক্রেতা কম।
উপজেলার শিঙ্গা গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, মাঝারি আকারের দুটি চাক জাল ৬০০ টাকায় কিনেছেন। এ জাল দিয়ে চিংড়ি ধরা সহজ।

কয়েকজন চাক জাল বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় চাক জাল ১৫ থেকে ২০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। বড় একটি জাল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। পাঁচ থেকে ছয় হাত জালের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তিন থেকে চার হাত জালের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর ছোট জাল ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। গৃহস্থ পরিবারের লোকজন অবসরে বাড়িতে চাক জাল তৈরি করেন। এ জাল তৈরি খুব সহজ। সময় কম লাগে। বাঁশ কেটে শলা তৈরি করা হয়। এরপর শলাটি গোল করে বেঁধে পরিমাণমতো সুতা দিয়ে তৈরি হয় চাক জাল। মাঝারি ও ছোট চাক জালের বিক্রি বেশি।

বিক্রির জন্য চাক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বুধবার দুপুরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌর শহরের বালুর মাঠে জালের হাটে
ছবি: প্রথম আলো

মঠবাড়িয়ার উত্তর মিঠাখালী গ্রামের চাক জাল বিক্রেতা মো. নাসির হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে গ্রামের মানুষ ধানখেতে চিংড়ি ধরে থাকেন। চাক জাল দিয়ে চিংড়ি ধরা হয়। সারা বছর ধরে চাক জাল বিক্রি হলেও বর্ষা মৌসুমে এর বেচাকেনা বেশি হয়। পুকুর ও নালায় মাছ ধরার জন্যও চাক জাল ফাঁদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।