যশোরে বিএনপি নেতার চালের আড়তে প্রকৌশলীর লাশ, পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

পিটিয়ে হত্যা
প্রতীকী ছবি

যশোর শহর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে মুল্লুক চাঁদের চালের আড়তের গুদাম থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার মধ্যরাতে যশোর শহরের বড়বাজার লোন অফিসপাড়া এলাকার ওই চালের আড়ত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত বায়েজিদ হাসান (৩৩) খুলনা শহরের বানরগাতি গ্রামের আল আমিন মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি মুল্লুক চাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, মুল্লুক চাঁদ ও তাঁর ভাই সঞ্জয় চৌধুরীর লোকজন বায়েজিদকে খুলনার বাড়ি থেকে তুলে চালের গুদামে নিয়ে আসেন। সেখানে বায়েজিদকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে আজ সোমবার দুপুরে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

পুলিশ ও বায়েজিদ হাসানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও তাঁর ভাই সঞ্জয় চৌধুরীর ভবন নির্মাণের কাজ চলছে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বায়েজিদ ওই ভবনের নির্মাণকাজ দেখভাল করতেন। ভবনের সরঞ্জাম কেনাকাটার পাঁচ লাখ টাকার অসংগতি ধরা পড়ার পর বায়েজিদ গা ঢাকা দেন। পরে তিনি খুলনার বাড়িতে চলে যান। সম্প্রতি ওই টাকার বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মধ্যস্থতায় সালিসও হয়। গতকাল দুপুরে রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও সঞ্জয় চৌধুরীর লোকজন খুলনার বাড়ি থেকে বায়েজিদকে যশোরে তুলে নিয়ে আসেন।

বায়েজিদের ভাই আবদুল আহাদ অভিযোগ করেন, ‘পাঁচ লাখ টাকার দাবিতে যশোর শহরের মুল্লুক চাঁদ (রফিকুল) ও তাঁর ভাই সঞ্জয় চৌধুরীর লোকজন আমার ভাইকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন। তাঁদের ঢাকায় ভবন নির্মাণকাজ দেখাশোনার চাকরি করতেন বায়েজিদ। ওই ভবনের সরঞ্জাম কেনাকাটা নিয়ে অর্থনৈতিক কোনো লেনদেন থাকতে পারে। সেটা আমাদের জানা নেই। মুল্লুক চাঁদ ফোন করে বারবার টাকা চেয়েছেন। আমরা বলেছি, টাকা দেব। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। বায়েজিদকে যেন মারধর করা না হয়। কিন্তু রাতে বায়েজিদের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।’

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক জানান, রাত সোয়া ১০টার দিকে মুল্লুক চাঁদ ফোন দিয়ে বলেন, ‘কে বা কারা এক যুবককে হত্যা করে আমার চালের আড়তের গুদামে লাশ রেখে দিয়েছে। আমি ঢাকাতে আছি।’ লাশটি উদ্ধার করার অনুরোধ জানান তিনি। এ খবর শুনে তাঁর সন্দেহ হয়। রাতে ওই আড়তে গিয়ে নৈশ প্রহরীকে লাশের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি গুদামের তালা খুলে দেন। পরে গুদামের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই নৈশ প্রহরীকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পাওনা টাকার জন্য বায়েজিদকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) জুয়েল ইমরান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বায়েজিদকে পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে মুল্লুক চাঁদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তিনি পাওনা টাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ড কে বা কারা ঘটিয়েছে, তা তিনি জানেন না।