মধ্যরাতে এসিল্যান্ডের বাসার জানালার কাচ ছিদ্র করে ঢুকল গুলির মতো চারটি বস্তু
নওগাঁর নিয়ামতপুরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) রেজাউল করিমের শোবার ঘর লক্ষ্য করে চারটি গুলিসদৃশ বস্তু ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় এসিল্যান্ড তাঁর ঘরে অবস্থান করছিলেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিয়ামতপুর উপজেলা প্রশাসন ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এসিল্যান্ড রেজাউল করিম নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরকারি কোয়ার্টারের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। গতকাল রাতে এসিল্যান্ড তাঁর বাসায় অবস্থান করছিলেন। রাত একটার দিকে তাঁর শোবার ঘর লক্ষ্য করে কে বা কারা গুলির মতো বস্তু ছোড়ে। জানালার কাচে গুলির মতো ছিদ্র করে এসব বস্তু ঘরে আছড়ে পড়ে। এ সময় শব্দও হয়। এসিল্যান্ডের কাছ থেকে ঘটনাটি শোনার পর রাতেও থানা-পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে এসিল্যান্ডের ঘরে গোলাকার চারটি ধাতব বস্তু পাওয়া গেছে। তাঁর ঘরের জানালার কাচে গোলাকার চারটি ছিদ্রও দেখা গেছে। এটি কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি কি না, তা পুলিশ তদন্ত করছে।
এ বিষয়ে মান্দা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকিরুল ইসলাম বলেন, এসিল্যান্ডের বাসা থেকে যেসব ধাতব বস্তু পাওয়া গেছে, সেগুলো আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি কি না, তা তদন্তের জন্য পুলিশের বিশেষ ইউনিটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা যাবে। তিনি আরও বলেন, কারা, কী উদ্দেশ্যে এই কাজ করছে, তাদেরকে চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে। যারাই এটা করুক না কেন, তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে এসিল্যান্ড রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি রাতে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ একটি শব্দ পেলাম। প্রথমে শব্দে কিছু মনে করি নাই। এর কিছুক্ষণ পর আবারও একটি শব্দ পেলাম। শব্দ পেয়ে জানালার কাছে গিয়ে দেখি, জানালার কাচে দুটো ফুটো। একটি বড়, আরেকটি ছোট। এর কিছুক্ষণ পর আবারও একটি শব্দ এবং আমার মাথার কয়েক ইঞ্চি দূর দিয়ে কিছু একটা চলে গেল। আমি সঙ্গে সঙ্গে জানালার বাইরে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। পরে ঘরের মেঝেতে চারটি ধাতব পদার্থ পড়ে থাকতে দেখি। ধাতব পদার্থগুলো পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানাবেন।’
নওগাঁর জেলা প্রশাসক আবদুল আউয়াল জানান, এসিল্যান্ডের বাসা লক্ষ্য করে গুলিসদৃশ চারটি ধাতব বস্তু নিক্ষেপ করা হয়েছে। এসব ধাতব বস্তু এসিল্যান্ডের বাসার জানালার গ্লাস ভেদ করে ভেতরে চলে যায়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কে বা কারা এটি ঘটিয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে বিকেল পাঁচটার দিকে নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসিল্যান্ডের বাসা থেকে যেসব ধাতব বস্তু পাওয়া গেছে, আমাদের পর্যবেক্ষণে সেগুলোকে প্রচলিত মারণাস্ত্রের গুলি বলে মনে হয়নি। ধাতব বস্তুগুলো বল-বিয়ারিংয়ের মতো গোলাকার। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো খেলনা পিস্তল থেকে এগুলো ছোড়া হয়েছে। দুর্বৃত্তরা আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য এটা করে থাকতে পারে। তবে যারাই এটা করুক না কেন, তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’