মধুখালীতে নিহত বিজিবি সদস্যের বাড়িতে চলছে মাতম

নিহত বিজিবি সদস্য নেপাল দাসের বাড়িতে পরিবারের সদস্য ও স্বজনের আহাজারি। আজ দুপুরে ফরিদপুরের মধুখালীর কলাগাছি দাসপাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বিজিবি সদস্য নেপাল দাসের (৩৫) বাড়িতে চলছে মাতম। এ আকস্মিক মৃত্যু কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছেন না তাঁর স্ত্রী, সন্তান, মা, বাবা, ঠাকুমাসহ স্বজনেরা। পরিবারের সদস্য ও স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের কলাগাছি দাসপাড়ার নারায়ণ চন্দ্র দাস ও কানন বালা দাস দম্পতির মেজ ছেলে নেপাল। এক বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজ। বোন হাসি রানী দাস নেপালের ছোট, বছর দুই আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই গোপাল দাস বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকে চাকরি করেন। সবার ছোট ভাই বাদল দাস সেনাবাহিনীর গাড়িচালক।

আরও পড়ুন

নেপাল দাস বিজিবি জয়পুরহাট-২০ ব্যাটালিয়নের সৈনিক পদে কর্মরত ছিলেন। কিছুদিন আগেই ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। ছুটি কাটিয়ে ১৫ নভেম্বর বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কর্মস্থলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজ শুক্রবার সকালে নেপাল দাসের মরদেহ জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল থেকে বিজিবি ক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দুপুরে মৃতদেহটি নেপালের বড় ভাই গোপাল দাসের কাছে তুলে দেন বিজিবির ওই ক্যাম্পের কর্মকর্তারা।

নেপালের বড় ভায়রা গৌড় দাস বলেন, নেপাল সব সময় মুঠোফোনে যোগাযোগ রাখতেন তাঁর সঙ্গে। মাঝেমধ্যে বলতেন, ডিউটি অনেক কষ্টের। চাকরি শেষ হলেই বাড়িতে ফিরে গ্রামে কিছু একটা করবেন।
নিহত নেপাল দাস
ছবি: সংগৃহীত

আজ দুপুরে মধুখালীতে নেপালের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা বিলাপ করে চলেছেন। কোনো সান্ত্বনাই থামাতে পারছে না স্ত্রী অঞ্জনা দাসের কান্না। নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে চার বছর বয়সী সন্তান অর্ণব দাস। বাবা যে আর কোনো দিন ফিরবে না, সেটি হয়তো বুঝছে না সে। অন্যদের কান্নার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। স্বজনদের আহাজারির পাশাপাশি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাও লক্ষ করা গেছে।
নেপালের বাবা নারায়ণ চন্দ্র দাস (৬৯) বলেন, তিনি ছেলের কাছে কখনো তাঁর কর্মস্থলে কোনো সমস্যা বা অসুবিধার কথা শোনেননি। গতকাল রাত ১০টার দিকে ছেলের সঙ্গে পুত্রবধূ অঞ্জনার মুঠোফোনে কথা হয়েছে। তাঁকে বলেছিলেন, তিনি তখন ডিউটিতে যাচ্ছেন।

বুক চাপড়াতে চাপড়াতে নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি এক হতভাগ্য বাবা। আমার কী দিয়া কী হইয়া গেল। আমার সাজানো সংসার তছনছ হয়ে গেল।’

নেপালের বড় ভায়রা গৌড় দাস বলেন, নেপাল সব সময় মুঠোফোনে যোগাযোগ রাখতেন তাঁর সঙ্গে। মাঝেমধ্যে বলতেন, ডিউটি অনেক কষ্টের। চাকরি শেষ হলেই বাড়িতে ফিরে গ্রামে কিছু একটা করবেন। তিনি বলেন, নেপাল খুব সামাজিক ও সদালাপী ছিলেন। কারও সঙ্গে তাঁর কোনো মনোমালিন্য বা বিবাদ থাকলে তাঁরা তো জানতে পারতেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, নেপাল উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন মধুখালীর সরকারি আয়েনউদ্দিন কলেজ থেকে। ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল তিনি বিজিবির সৈনিক পদে যোগ দেন। ২০১৬ সালে তিনি বিয়ে করেন। চার বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান রয়েছে তাঁর।

নেপালের মামাতো ভাই সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট হারাধন দাস বলেন, ‘কীভাবে নেপাল মারা গেল, তার বিন্দুবিসর্গ আমরা জানি না। নেপালের বড় ভাই গোপাল দাস জয়পুরহাট বিজিবির ক্যাম্পে গিয়ে মরদেহ বুঝে নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তিনি (গোপাল) এলে হয়তো সবকিছু জানতে পারব।’ তিনি বলেন, আজ রাতে পারিবারিক শ্মশানঘাটে নেপালের শেষকৃত্য সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা।