ধৈর্যের পরীক্ষা নিলে আবার বিস্ফোরণ হবে: জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘শুধু জামায়াতে ইসলামী করার কারণে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। নেতাদের গুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। অফিস ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। শেষে আমাদের রাজনীতি নিষিদ্ধও করা হয়েছে। এত কিছু করেও আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি হাসিনা সরকার। এখন অনেকেই আবার আমাদের সমালোচনা শুরু করেছেন। আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না, ধৈর্যের পরীক্ষা নিলে আবার বিস্ফোরণ হবে।’
আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় ফেনী শহরের একটি মিলনায়তনে গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন মন্তব্য করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাসুম, কুমিল্লা মহানগরীর আমির কাজী দীন মোহাম্মদ, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও সাবেক ফেনী জেলা আমির লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, জেলা জামায়াতের আমির মুফতি আবদুল হান্নান, গণ–অভ্যুত্থানে আহত ইসলামী ছাত্রশিবির ফেনীর সভাপতি আবু হানিফ হেলাল প্রমুখ।
সভায় শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। সীমাহীন ত্যাগের বিনিময় পরিবর্তন পেয়েছি। শহীদদের পরিবার হাহাকার করছে। এখন প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়ানো। আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। আমাদের উচিত শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখানো। ক্রেডিট দেখানো নয়। ভাগ-বাঁটোয়ারা করা নয়।’
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার ও আহতদের হাতে উপহার তুলে দেন জামায়াতের আমির। অনুষ্ঠানে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করা হয়। এ সময় পুরো সভাস্থল দলীয় স্লোগানে স্লোগানে মুখর ছিল।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফেনীর পরশুরামের সীমান্তবর্তী বল্লামুখা বাঁধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শফিকুর রহমান। বাঁধের ভাঙন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুধু এ বেড়িবাঁধ নয়, পুরো নদীজুড়ে যে ব্লকগুলো দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো পড়ে গেছে। সেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। অতীতে যারা এ অপকর্ম করেছে, তারা ফল ভোগ করবে। কিন্তু এটির সঙ্গে তারা দেশবাসীকেও কষ্ট দিচ্ছে, যা আমাদের খারাপ লাগে। আমরা চাই সরকার শান্তিপূর্ণ স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটুক।’
জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা এমন সরকার চাই, যাদের গ্রাম থেকে শুরু করে পার্লামেন্টে দায়বদ্ধতা থাকবে। তাদের হাতগুলো দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকবে এবং জনগণের আমানতের খেয়ানত হবে না। তাহলেই উন্নয়নের জন্য দেশের যে সম্পদ ব্যয় হবে, তা কাজে লাগবে। দেশের চেহারাও বদলে যাবে ও দেশ মাথা উঁচু করে করে দাঁড়াবে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে চিন্তার ভিন্নতা থাকতেই পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হওয়া প্রয়োজন। ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো না হলে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।’
সকাল সাড়ে ১০টায় জামায়াতের আমির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারানো ফেনীর কলেজশিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের কবর জিয়ারত করেন। জেলার ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নে শ্রাবণের কবর জিয়ারত শেষে তাঁর বাবা ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন এবং পরিবারটির খোঁজ নেন তিনি।
জিয়ারত শেষে শফিকুর রহমান বলেন, ‘শ্রাবণের মতো বীর সন্তানদের জন্যই আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। শহীদের মা-বাবা গর্বিত, বীরের অভিভাবক হওয়া সব পিতা-মাতার ভাগ্যে থাকে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সব সময় শহীদদের কথা স্মরণে রাখব। তাঁরা যে স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করেছিলেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে জামায়াত সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।’
এর আগে সকাল ১০টায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শহরের সুলতানপুর এলাকার তিন পরিবারকে জামায়াতের পক্ষ থেকে দেওয়া নতুন ঘর উদ্বোধন করেন শফিকুর রহমান।