নাটোর থেকে চুরি হওয়া নবজাতক এক দিন পর কুষ্টিয়ায় উদ্ধার

শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সদর হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়ার নবজাতককে উদ্ধারের কথা জানান নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান
ছবি: প্রথম আলো

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মহিষডাঙ্গা গ্রামের মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী হাসনা হেনা জন্ম দেন এক কন্যাসন্তান। সন্তানকে পেয়ে মাহফুজুর-হাসনা হেনা দম্পতি আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু তাঁদের এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শুক্রবার দুপুরে নাটোর সদর হাসপাতাল থেকে এক নারী ওই নবজাতক চুরি করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় পাগলপ্রায় নবজাতকের মা–বাবা। তবে চুরি যাওয়ার এক দিন পরই ওই নবজাতককে কুষ্টিয়া থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান ওই নবজাতক উদ্ধারের কথা জানান। তিনি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে দুই দিন বয়সী ওই নবজাতককে মা হাসনা হেনার কোলে তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত সবার চোখেমুখে ছিল খুশির ঝিলিক। একমাত্র সন্তান ফিরে পেয়ে সবচেয়ে বেশি  খুশি হন মা। ওই শিশু চুরির অভিযোগে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নাটোর সদর হাসপাতাল ও সদর থানা সূত্রে জানা যায়, হাসনা হেনাকে গত বুধবার নাটোর সদর হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। জন্মের পরপরই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে একই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার সকালে হাসনা হেনার কাছে তাঁর শাশুড়ি খায়রুন নাহারকে রেখে পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়িতে চলে যান।

দাদি খায়রুন নাহার শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নবজাতককে কোলে নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে বসে ছিলেন। এ সময় নার্সের পোশাক পরা মধ্যবয়সী এক নারী চিকিৎসককে দেখানোর কথা বলে তাঁর কোল থেকে নবজাতককে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরই খায়রুন নাহার নবজাতককে নিয়ে আসার জন্য চিকিৎসকের কক্ষের দিকে গিয়ে আর তাকে পান না। তখন তিনি বুঝতে পারেন, নবজাতককে কৌশলে চুরি করা হয়েছে। তিনি ডাকচিৎকার শুরু করলে নবজাতকের মা ও হাসপাতালের কর্মচারীরা ছুটে আসেন। হাসপাতাল চত্বরে কোথাও না পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

পুলিশ এসে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফুটেজে দেখা যায়, মধ্যবয়সী এক নারী নার্সের পোশাকে ওয়ার্ডে ঘোরাঘুরি করছেন। একপর্যায়ে শিশুটিকে তার দাদির কাছ থেকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালের প্রধান ফটক পার হয়ে অটোরিকশায় তিনি চলে যান। এরপর পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শিশুটি উদ্ধারে মাঠে নামেন। শুক্রবার রাতেই শিশুটির বাবা বাদী হয়ে সদর থানায় মানব পাচার আইনে অজ্ঞাতনামা এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।

পুলিশের পাঁচটি দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে দ্রুত তদন্ত শুরু করে। শিশুটি অসুস্থ থাকায় জেলার বাইরে রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের হাসপাতালগুলোতেও খোঁজ নেয় পুলিশ। পরে রাতেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাটোর সদর থানার উপপরিদর্শক জামাল হোসেন ও সাজ্জাদ হোসেন নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকার ভাড়াটিয়া মূল অভিযুক্ত শিশুটি হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. কাজলীকে (৩০) আটক করেন। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার সকালে কুষ্টিয়া সদরের খাজানগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে শিশুটি উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে রাখার অপরাধে পুলিশ ওই গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী কাজলী খাতুনকে (৪২) আটক করে। কাজলী খাতুন জানিয়েছেন, তাঁর কোনো সন্তান না থাকায় কুষ্টিয়া জেলার পোড়াদহ এলাকার মেয়ে বর্তমানে নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকার ভাড়াটিয়া কাজলীর কাছ থেকে তিনি আটহাজার টাকায় ওই নবজাতককে কিনেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, কাজলী কোনো শিশু অপহরণ চক্রের সদস্য কি না পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।