৫০০০ ট্রলার ঘাটে, সাগরে মাছ ধরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলেরা

শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাটে অন্তত দুই হাজার ট্রলার তীরে নোঙর করে আছে। গতকাল সোমবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে কক্সবাজারে জেলেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এমনিতেই প্রচণ্ড গরমের কারণে ১০ থেকে ১২ দিন ধরে সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। এর মধ্যে চড়া মূল্যে জ্বালানি কিনে সাগরে নামার পর মাছ না পেলে অনেক লোকসান গুনতে হবে। এ কারণে ট্রলারমালিকেরা সাগরে ট্রলার নামাতে রাজি হচ্ছেন না। এ কারণে প্রায় পাঁচ হাজার ট্রলার ঘাটে নোঙর করা আছে।

ট্রলারমালিক ও জেলেদের অভিযোগ, গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে সারা দেশে নতুন দামে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিন বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি লিটারে আরও অতিরিক্ত এক থেকে দুই টাকা বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শহরের ক্যাপ্টেন কক্স ফিলিং স্টেশনে প্রতি লিটার তেলে এক টাকা করে বেশি আদায় করা হচ্ছে। সরেজমিন এর সত্যতাও পাওয়া গেছে।

কুতুবদিয়ায় মাছ ধরার জন্য ছোট–বড় অন্তত দেড় হাজার ট্রলার আছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে প্রায় এক হাজার ট্রলার ঘাটে নোঙর করা আছে বলে জানান কুতুবদিয়া ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফিলিং স্টেশনের সহকারী ব্যবস্থাপক বেলাল উদ্দিন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল কক্সবাজার পৌঁছাতে বেশি খরচ পড়ছে। তাই মালিকের নির্দেশে তাঁরা প্রতি লিটারে এক টাকা বেশি আদায় করছেন। এর বিপরীতে রসিদও দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং টেকনাফ ও পেকুয়া উপকূলে নতুন দামের চেয়ে অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই টাকা বেশি আদায়ের অভিযোগ করছেন ট্রলারমালিকেরা।

কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল গ্রামের আব্বাস উদ্দিনের ট্রলার আছে ২০টি। তিনি সব কটি ট্রলার বসিয়ে রেখেছেন। আব্বাস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে এখন ইলিশ নেই। তেলের দামও অতিরিক্ত। ১০ থেকে ১২ দিনের প্রতি ট্রিপে একটি ট্রলারের দুই থেকে আড়াই হাজার লিটার ডিজেল লাগে। তেলের দাম বাড়ায় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এত দাম দিয়ে তেল কিনে সাগরে ট্রলার নামাতে ভয় হচ্ছে। সাগরে যদি আশানুরূপ মাছ ধরা না পড়ে, তাহলে অনেক টাকা লোকসান হবে।

কুতুবদিয়ায় মাছ ধরার জন্য ছোট–বড় অন্তত দেড় হাজার ট্রলার আছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে প্রায় এক হাজার ট্রলার ঘাটে নোঙর করা আছে বলে জানান কুতুবদিয়া ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কোথাও ফিলিং স্টেশন নেই। কয়েকজন এজেন্ট চট্টগ্রাম থেকে তেল কিনে কার্গো ট্রলারে করে নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করেন। এজেন্টরা সরকারনির্ধারিত দামের চেয়েও প্রতি লিটারে দেড় থেকে দুই টাকা বেশি দাম নিচ্ছেন। ট্রলারমালিকদেরও বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে।

এদিকে গতকাল বিকেলে শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাট গিয়ে দেখা গেছে, অন্তত দুই হাজার ট্রলার তীরে নোঙর করে আছে। শহরের নুনিয়াছটার ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন তাঁর আটটি ট্রলার নোঙর করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে তাঁর ৮টি ট্রলার সাগরে নেমেছিল। তখন প্রতিটি ট্রলারে খরচ হয় তিন লাখ টাকা করে। মাছ বিক্রি করে ছয়টি ট্রলার খরচ ওঠাতে পারলেও অপর দুটি ট্রলারের লোকসান গুনতে হয়েছে। এখন সাগরে ইলিশ নেই। অন্যান্য মাছও ধরা পড়ছে না। এমন অবস্থায় অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সাগরে ট্রলার নামিয়ে লাভ নেই। ভারী বৃষ্টি সাগরে ইলিশের আগমন ঘটতে পারে।

টেকনাফে জ্বালানি তেল বিক্রির স্টেশন আছে পাঁচটি। সেখান থেকে নতুন দামে তেল কিনে কেউ কেউ ৮ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, বাহারছড়া ও শীলখালী এলাকায় দেড় থেকে দুই টাকা বেশিতে কেরোসিন-ডিজেল বিক্রি করছেন।

এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা জ্বালানি পরিবেশক সমিতির সভাপতি দিদার হোসেন বলেন, শুধু অকটেন প্রতি লিটারে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে, অর্থাৎ ১৩৫ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য জ্বালানি, যেমন ডিজেল-কেরোসিন লিটারে ১১৪ এবং পেট্রল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানির নতুন দাম নির্ধারণের পর থেকে টেকনাফের স্টেশনগুলোয় তেলা বেচাকেনা অর্ধেকে নেমেছে বলে তিনি দাবি করেন।