নিক্সনপন্থীদের দখলে থাকা কার্যালয়ে তালা ভেঙে ঢুকে সভা করলেন কাজী জাফর উল্যাহ

ফরিদপুরের সদরপুরে দলীয় কার্যালয়ে তালা ভেঙে ঢুকে সমর্থকদের নিয়ে সভা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ ও তাঁর সমর্থকেরা দখলে নিয়েছেন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে দলীয় কার্যালয়টির তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি উপলক্ষে বর্ধিত সভা করেন কাজী জাফর উল্যাহ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই কার্যালয়ে ঢুকে কাজী জাফর উল্যাহর সমর্থকেরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির পাশে থাকা ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের ছবি নামিয়ে সেখানে কাজী জাফর উল্যাহর ছবি টানিয়ে দেওয়া হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, ১০ অক্টোবর ভাঙ্গায় কাজী ইউসুফ স্টেডিয়াম মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধন করতে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে একটি ট্রেনে করে ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে আসার কথা প্রধানমন্ত্রীর।

ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি হিসেবে আজ সদরপুরে আয়োজিত বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আলম রেজা।

বর্ধিত সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আমি সদরপুরে আওয়ামী লীগের জন্য এত সুন্দর একটি অফিস করে দিয়েছিলাম। নিজস্ব অফিস, নিজস্ব দালান—গর্বের ব্যাপার। অথচ একটি ডাকাতের দল বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনদের নিয়ে অফিস দখল করে রেখেছিল।’ তিনি ওই সভা থেকে ১০ অক্টোবর ভাঙ্গায় অনুষ্ঠেয় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সকালেই মাঠে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান।

ওই বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আনিছুর রহমান, ঢেউখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহামান, উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্মী মো. ইয়াকুব আলী মোল্লা, উপজেলা যুবলীগ কর্মী সাইফুল কবির, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. মশিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে কাজী জাফর উল্যাহর কাছে সদরপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় স্থাপনের দাবি জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে সদরপুর স্টেডিয়াম মাঠের পূর্ব পাশে আনুমানিক ৪ শতাংশ খাসজমিতে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে আওয়ামী লীগের কার্যালয় চালু করা হয়। ২০১৮ সালের শেষের  দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের সঙ্গে হাত মেলান। নিক্সনের শিবিরে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরেই উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ওই দলীয় কার্যালয়টি নিক্সনপন্থীরা দখল করে নেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক আবু আলম রেজা বলেন, ‘দলীয় ওই কার্যালয় দীর্ঘদিন ধরে নিক্সনপন্থীরা তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। এ কারণে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে কার্যালয়টি খুলে দিতে বলি। প্রথমে আমরা জানতাম কার্যলয়ের তালার চাবিটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমানের কাছে আছে। তাঁর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাবি তাঁর কাছে নেই। পরে আমরা দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে সভা করি।’
ওই কার্যালয় থেকে নিক্সন চৌধুরীর ছবি সরিয়ে কাজী জাফর উল্যাহর ছবি স্থাপন করার সত্যতা নিশ্চিত করেন তিনি।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় নিয়ে আগে সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন নেই। তাঁরা (কাজী জাফর উল্যাহপন্থীরা) দীর্ঘদিন ওই অফিসে তালা মেরে রেখেছিলেন। এত দিন ব্যবহার করেননি, কোনো সভা করেননি। আজ সে তালা খুলে সভা করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিক্সন। ওই ঘটনার পর এ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত তিন উপজেলায় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।