আবারও নারী ইউএনওর ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার বিরোধিতায় কাদের সিদ্দিকী

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খানের স্মরণসভায় দেওয়া বক্তব্যে আবার নারী ইউএনওর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার বিরোধিতা করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আলমের ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার ঘটনা আবারও সামনে এনে সমালোচনা করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সখীপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খান ওরফে নয়া মুন্সির স্মরণসভায় তিনি অংশ নেন। সেখানে প্রসঙ্গটি তোলেন তিনি।

সখীপুরের ইউএনওর উদ্দেশে গতকালের আয়োজনে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘একজন মুসলিম পুরুষের জানাজার সময় কোনো নারীর যাওয়ার অধিকার নেই। এ বিষয়ে আল্লাহর কাছে যদি নয়া মুন্সির (মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খান) জবাবদিহি করতে হয়, তাহলে আমি এই সরকারকেও ধরব, এই নারী ইউএনওকেও ধরব।’

এর আগে গত ২৯ এপ্রিল বীব মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খানের কফিনে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন (গার্ড অব অনার) করতে গেলে কাদের সিদ্দিকী ইউএনও ফারজানা আলমকে বাধা দেন।

আরও পড়ুন

গতকালের স্মরণসভায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘নয়া মুন্সির জানাজার সময় যে ঘটনা ঘটেছে, সখীপুরের কোনো মানুষকে এর প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। কিন্তু আমি একজন মুসলমান হিসেবে যত দিন বেঁচে থাকব আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের হুকুমের বাইরে পা রাখব না। এখানকার ইউএনও আমার মেয়ের চাইতেও বয়সে ছোট। প্রতিটি নারী আমার কাছে মায়ের মতো সম্মানের। আমি কোনো নারীকেই ছোট করতে চাই না। কিন্তু আমি তারপরও বলব—মুসলিম পুরুষের জানাজার সময় শরিয়ত মোতাবেক কোনো নারীর যাওয়ার অধিকার নেই।’

আপনি ছোট মানুষ, বয়স কম। তবে এটা কিন্তু অনেক দূর পর্যন্ত যাবে।
ইউএনও ফারজানা আলমের উদ্দেশে কাদের সিদ্দিকী

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খানের জানাজা শেষে কাদের সিদ্দিকী চলে যাওয়ার পর মরদেহের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানান ইউএনও ফারজানা আলম। সে সময় ইউএনও প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি জানাজা পড়তে যাইনি। গিয়েছিলাম বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের জন্য। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী হাজার লোকের সামনে আমাকে অপমান করেছেন। তিনি (কাদের সিদ্দিকী) নিঃসন্দেহে একজন বড় মাপের মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।’

আরও পড়ুন

নারী ইউএনওদের গার্ড অব অনার দিতে আইনে কোনো বাধা নেই—ফারজানা আলমের এই বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গতকালের স্মরণসভায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘এই আইন যখন হয় তখন আমিও ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে সালাম দেওয়া হবে, এ আইন তৈরিতে আমারও যথেষ্ট ভূমিকা আছে। সেখানে কোনো মহিলার সালাম দিতে বাধা নেই। কিন্তু ওই আইনে এটাও লেখা নেই যে কোনো মহিলা শরিয়ত মোতাবেক কোনো মুসলমান পুরুষের মরদেহে সালাম দিতে পারবে।’ ইউএনও ফারজানা আলমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি ছোট মানুষ, বয়স কম। তবে এটা কিন্তু অনেক দূর পর্যন্ত যাবে।’

স্মরণসভায় উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আহ্বায়ক আবদুস সবুরের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শ ম আমজাদ হোসেন, কাদের সিদ্দিকীর ভাই শামীম আল মুনসুর আজাদ সিদ্দিকী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যের বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আলম আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকালের ওই অনুষ্ঠানে আমি যাইনি। তিনি কী বলেছেন, তা–ও আমি শুনিনি। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’

আরও পড়ুন