টাঙ্গাইলের মির্জাপুর
টিলার মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
কিছু টিলা গভীর করে কাটা হয়েছে। তাতে বর্ষাকালে মাটি ধসে অনেকের বাড়ির ওপর পড়তে পারে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় পরিবেশ আইন অমান্য করে খননযন্ত্র দিয়ে টিলার মাটি কেটে ফেলা হচ্ছে। এসব মাটি ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, টিলার মালিকেরা কিছু টাকার লোভে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ঝামেলা এড়াতে রাতের বেলা এসব মাটি কাটা হচ্ছে। অথচ স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারা) অনুযায়ী প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় কাটা বা নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। তাঁরা জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন।
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তরফপুর ইউনিয়নের টাকিয়া কমদা গ্রামে তিনটি স্থানে টিলা কাটা হচ্ছে। সেখানে দুটি জায়গায় খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) ছিল। টাকিয়া কদমা বাজার থেকে পূর্ব দিকে গিয়ে দেখা যায়, টাকিয়া কদমা-পাঁচগাঁও সড়কের উত্তর পাশে একটি জায়গায় টিলা কাটার চিহ্ন রয়েছে। এর একটু পূর্ব দিকে বিশাল এলাকা জুড়ে টিলা কাটা হচ্ছে। এর গভীরতা ১৫ ফুটের বেশি। পাশেই মাটি ধসে পড়ার সম্ভাবনায় ঝুঁকিতে রয়েছে দুটি কবর ও একটি বিদ্যুতের খুঁটি। সেখানে বন্ধ অবস্থায় একটি খননযন্ত্র ছিল।
ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে সরকারের অনুমতি লাগে। বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।আমিনুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), মির্জাপুর
খোরশেদ আলম দেওয়ান (৯১) নামের এক ব্যক্তি বলেন, তাঁর ভাইয়ের ছেলেরা এ টিলা কাটছে। টিলা কাটায় তাঁরা বিপদে পড়েছেন। গত বছর একটু কম কেটেছিল। এইবার একবারে গভীর করে কেটেছে। এখন তাঁদের বাড়িতে ওঠার রাস্তা আর নেই।
শওকত হোসেন বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। যেভাবে গভীর করে টিলার মাটি কাটা হয়েছে, তাতে বর্ষাকালে মাটি ধসে তাঁর ঘরও পড়তে পারে। ঘর পড়ে গেলে তাঁরা কোথায় যাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত।
এ বিষয়ে টিলার মালিক শাহীন দেওয়ানের স্ত্রী নাছিমা বেগম বলেন, ‘আমরা রাস্তায় চলাফেরা করাবার পারি না। আবাদ অয় না। হেই জন্য রোকন নামে একজনের কাছে ১ হাজার টাকা গাড়ি দরে মাটি বিক্রি করছি। তারা সরকারের কাছে থিক্যা মাটি কাটার পারমিশন নিছে।’
স্থানীয় লোকজন বলেন, প্রশাসনের ঝামেলা রাতের বেলা টিলার মাটি কেটে আশপাশের ইটভাটাগুলো নেওয়া হয়।
নয়াপাড়া এলাকায় এক্সকাভেটরচালক আবদুল মিয়া নামে এক ব্যক্তির টিলা থেকে কাটা মাটি সমান করছিলেন। তিনি এ প্রতিবেদককে ছবি তুলতে দেখে যন্ত্রটি বন্ধ করে নেমে আসেন। এক্সকাভেটর কার জিজ্ঞেস করলে দৌড়ে চলে যান। সেখানেও একটি বিদ্যুতের খুঁটি ঝুঁকিতে রয়েছে।
পাঁচগাঁও হোসেন মার্কেট এলাকার মাটি ব্যবসায়ী মো. রোকন সিকদার জানান, তিনি ছাড়াও স্থানীয় শহিদুল দেওয়ান ও বাবুল সিকদার মিলে মাটি ব্যবসা করেন। টাকিয়া কদমা এলাকার তিনটি স্থান থেকেই তাঁরা প্রতি ট্রাক মাটি ১ হাজার টাকা দরে কিনেছেন। ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই টিলার মাটিগুলো প্রতি রাতে কেটে এনে আশপাশের ইটভাটায় বিক্রি করেন।
মো. রোকন সিকদার আরও বলেন, ‘মাটি কাইটা শান্তি নাই। গত ৭ তারিখেও আমারে দেড় লাখ জরিমানা করছে। বাবুল আর শহিদুলের করছে ৫০ হাজার কইর্যা। গতবারও দিছিলাম ৬ লাখ।’
বাবুল সিকদার বলেন, রোকনের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। তবে তিনি উপজেলার বাঁশতৈল এলাকায় মাটি কাটেন। টাকিয়া কদমা থেকে রোকনের সঙ্গে শহিদুল দেওয়ান ও গোড়াই এলাকার জুলহাস নামে আরেক ব্যক্তি মাটি কাটেন।
এসব বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে সরকারের অনুমতি লাগে।