গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে ওষুধ কারখানার শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সুরিচালা এলাকায় ওষুধ তৈরির একটি কারখানার শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। আজ সোমবার সকালে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পরে বিকেলে পুলিশের সহযোগিতায় বেতন পাওয়ার আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকেরা।
ঘটনাটি উপজেলার সুরিচালা এলাকায় জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ইউনিট-২ এ। কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের তিন মাস ধরে বেতন দেওয়া হচ্ছে না। মালিকপক্ষের কাছে বেতন চাইতে গেলে নানা টালবাহানা শুরু করে। বাধ্য হয়ে বেতনের দাবিতে আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি এবং কারখানার ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন।
খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা–পুলিশ, শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ কর্মকর্তারা শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সামাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক শ্রমিক বলেন, কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে কিছু টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে কোনোরকমে চলছি। বেতন চাইলেই দিই, দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করে। এভাবে তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। ঘরভাড়া দিতে পারছেন না।
জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালের কর্মকর্তা রাজু আহাম্মেদ বলেন, কারখানায় বর্তমানে স্টাফসহ তিন শতাধিক শ্রমিক আছেন। এর মধ্যে স্টাফদের বেতন বাকি প্রায় আট মাস; আর শ্রমিকদের পাওনা রয়েছে তিন মাসের। কারখানার মহাব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম ও উৎপাদন কর্মকর্তা কৌশিক আরেফিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান বলেন, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা চলছে। শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করছেন। কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ
সোমবার সকালে গাজীপুর মহনগরীর কোনাবাড়ীতে কাদের সিনথেটিক ফাইভার্স লিমিটেড নামের তৈরি পোশাকের একটি কারখানার শ্রমিকেরা ৯ দফা দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন। সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন। কর্তৃপক্ষের কাছে ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করার পরও কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
শ্রমিকদের দাবি হচ্ছে: বেতন প্রতি মাসে ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। মেডিকেল ছুটি পাস করালে হাজিরা বোনাস থাকতে হবে। মেডিকেল ছুটি কোনো ‘অফিসের স্যার’ পাস করাতে পারবেন না, মেডিকেল ছুটি ডাক্তার দ্বারা পাস করাবেন। মেডিকেলে সব ধরনের ওষুধ থাকতে হবে। নাইট বিল মিনিমাম ১৫০ টাকা দিতে হবে। বার্ষিক ছুটির টাকা জানুয়ারি মাসে দিতে হবে। শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য ছোট বাটন ফোন আনার অনুমতি দিতে হবে। যাঁরা চাকরি ছাড়বেন (রিজাইন) তাঁদের টাকা সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে। বিনা কারণে কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। যদি কোনো কারণে শ্রমিককে বাহির করা হয়, তাহলে চলতি মাসের বেতন এবং ৩ মাস ১৩ দিনের বেতনসহ রিজাইনের টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের কোনাবাড়ী জোনের পুলিশ পরিদর্শক মোর্শেদ জামান বলেন, শ্রমিকেরা ৯ দফা দাবিতে কারখানার মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে কারখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আওরঙ্গ জেব বলেন, গত মাসের বেতন ১৬ অক্টোবর দুপুর ১২টার মধ্যে পরিশোধ করা হবে। অন্যান্য যে দাবি দাওয়া আছে, তা পর্যায়ক্রমে মেনে নেওয়া হবে।