দুষ্টামির শাস্তি দিতে কিশোরের পায়ে পড়ল শিকল

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মাঝুখান গ্রামে কিশোর মিলনকে শিকল দিয়ে এভাবেই বেঁধে রেখেছেন গ্রাম পুলিশ করিম মিয়া। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে ফেলে রেখে মা ময়না বেগম চলে যান অন্যের হাত ধরে। এরপর বাবা শাকিল মিয়া সন্তান দুটিকে লালনপালন করেন। ২৫ দিন আগে শাকিল অসুস্থ হয়ে মারা যান। এর পর থেকে বড় অসহায় অবস্থায় পড়েছে ওই দুই ভাই–বোন। এর মধ্যে বোন আয়েশা আক্তারের (৯) জায়গা হয়েছে স্থানীয় এতিমখানায়। আর তার ভাই মিলন হোসেনের (১৪) জীবন কাটছে শিকলবন্দী অবস্থায়। তার গ্রাম পুলিশ চাচার দাবি, মিলন দুষ্টু স্বভাবের। এ জন্য শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে তাকে।

ঘটনাটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মাঝুখান পশ্চিমপাড়া এলাকার। মিলনকে শিকলবন্দী করে রাখছেন কেন? জবাবে তার চাচা মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ ও মাঝুখান গ্রামের বাসিন্দা করিম মিয়া বলেন, ‘ও মানুষের বাড়ি, দোকান থাইকা এইটা–সেইটা না বলে নিয়া চইলা আসে। হের লাইগা ওরে শিকল দিয়া বাইন্দা রাখছি। ওর কারণে মানুষ আমারে নানা কথা বলে। সমাজে মুখ দেখাতে পারি না। ওর বাবাও একটা অমানুষ ছিল, ছেলেটাও সেই রকম হয়েছে।’

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মাঝুখান গ্রামের একটি বনের জমিতে দুটি ঘরে বসবাস করেন করিম মিয়ার বাড়ির লোকজন। দক্ষিণ পাশের ঘরের বারান্দার খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে কিশোর মিলনকে। শিকলটি অনুমানিক সাত থেকে আট ফুট লম্বা। সেখানেই দিন কাটছে তার। সন্ধ্যা হতেই নিয়ে যাওয়া হয় ঘরের ভেতর।

কাছে যেতেই মিলন কান্না করতে করতে বলে ওঠে, ‘আমারে ছাইড়া দিতে কন, আমি আর শয়তানি–দুষ্টামি করুম না। আমি ভালা হইয়া যামু।’ কেন তোমাকে শিকলে বেঁধে রেখেছে জানতে চাইলে মিলন বলে, ‘আমার খালি খিদা লাগে, তাই মাইনষের (মানুষের) বাড়ি থাইক্যা এইটা-সেইটা না বইলা নিয়ে আসি। হের লাইগা আমারে শিকল দিয়া বাইন্দা রাহে। আমারে ঠিকমতো খাইবারও দেয় না।’

কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আয়েশা ও মিলনকে রেখে তাদের মা পালিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর তাদের বাবা শাকিল মিয়া আবার বিয়ে করেন। সেই স্ত্রী থাকেন সৌদি আরবে। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে গত ২০ আগস্ট মারা যান শাকিল। মৃত্যুর কয়েক দিন পরই চাচা ভাতিজি আয়েশাকে স্থানীয় একটি এতিমখানায় পাঠিয়ে দেন এবং শিকলবন্দী করেন ভাতিজা মিলনকে। স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য, শিকলে বেঁধে মিলনকে নির্যাতন করা হচ্ছে।

ওই কিশোরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রতিবেশীরা বললে তাতে কান দিচ্ছেন না করিম মিয়া ও তাঁর স্ত্রী। মহসিন নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকবার ওর চাচা আর চাচিকে ছেড়ে দিতে বলেছি, কিন্তু তাঁরা ওকে ছেড়ে না দিয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করছেন। প্রতিবাদ করলে উল্টো আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করতে আসেন।’
আজ বুধবার সন্ধ্যায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই কিশোরকে তখনো শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে। মিলনকে ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন, এমন প্রশ্নে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে করিম মিয়া বলেন, ‘ওরে (মিলন) পাহারা দিয়ে কে রাখব। আপনি রাখবেন?’

মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। খোঁজ নিয়ে ওই কিশোরকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে।