দোষীদের শাস্তির আশ্বাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সঙ্গে প্রশাসনের সমঝোতা

গতকাল ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায়
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার পর দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার আশ্বাসে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ওই সমঝোতা হয়। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ইকবাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী প্রক্টর শাহানা রহমানকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর আল-মামুন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক উকিল হলের সহকারী প্রভোস্ট নাজমুস সাকিব। কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিনিয়র-জুনিয়র বিরোধ নিয়ে গতকাল দুপুর ও বিকেলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে নুহাশ ও নজরুল ইসলাম ওরফে নাঈমের অনুসারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনার জেরে বিকেল থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এর জেরে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে উভয় পক্ষের সাত-আটজন আহত হন।

আরও পড়ুন

সংঘর্ষের খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সেখানে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর উভয় পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হলের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেখানেও উভয় পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং ভাষাশহীদ সালাম হলের দুটি কক্ষে ভাঙচুর চালায়। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তবে শব্দগুলো ককটেল বিস্ফোরণ না গুলির, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, সালাম হলের সামনের ঘটনায় ইটের আঘাতে একাধিক শিক্ষকসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত শিক্ষকদের মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন আছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আহত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনা থামাতে ঘটনাস্থলে যান ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ইকবাল হোসেনসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। একই সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধে সুধারাম থানা থেকে পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠানের নেতৃত্বে এক দল পুলিশও ক্যাম্পাসে যায়। প্রশাসন ও পুলিশের প্রচেষ্টায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

এরপর রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের দুই নেতা মোহাইমিনুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোর্তাহীন বিল্লাহ ও সুধারাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ছাত্রলীগের দুই নেতাই হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তির আশ্বাস দিলে উভয় পক্ষ তা মেনে নেয়।

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা মোহামইমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামান্য বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। ক্রমে তা বাড়ছিল। প্রশাসন তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে। বৈঠকে আমরা হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছি। প্রশাসন তা মেনে নিয়েছে।’

তবে অপর পক্ষের নেতা নজরুল ইসলাম দাবি করেন, বৈঠকে সে রকম কোনো সমঝোতা হয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের হামলায় আমিসহ আমার পক্ষের অনেকে আহত হয়েছেন। এ কারণে বৈঠকে সেই অর্থে কোনো সমঝোতা হয়নি। প্রশাসন আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় নিয়েছে। বলেছে, ওই সময়ের মধ্যে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’

সুধারাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, সিনিয়র-জুনিয়র বসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত। বিক্ষিপ্তভাবে ইটের আঘাতে উভয় পক্ষের কয়েক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরে রাতে সমঝোতা বৈঠকে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির সিদ্ধান্তের পর উভয় পক্ষ শান্ত হয়। তবে এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত।