কারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে তুরাগ নদের পানি 

কারখানার বর্জ্যে পানির রং পরিবর্তনসহ মারাত্মক হুমকির মুখে পরিবেশ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, কারখানাগুলোর ইটিপি বন্ধ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে তুরাগ নদ ও খাল-বিলে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাইমাইল এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরে শিল্পকারখানার তরল বর্জ্যে তুরাগ নদ ও খাল–বিলের পানি দূষিত হচ্ছে। কারখানাগুলোতে ইটিপি থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেক কারখানা এখনো তা নির্মাণ করেনি। আবার যারা নির্মাণ করেছে, তাদের অনেকে ইটিপি চালু রাখছে না। ফলে ডাইং–ওয়াশিংয়ের অপরিশোধিত পানিতে দূষিত হচ্ছে গাজীপুরের নদ-নদী, খাল–বিল। 

কারখানার বর্জ্যে পানির রং পরিবর্তনসহ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, কারখানাগুলোর ইটিপি বন্ধ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

নদ-নদী রক্ষায় আইনের কঠোর বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে জানায় বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন। তিনি বলেন, শিল্পকারখানার তরল বর্জ্যে মরণদশা গাজীপুরের বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি। এতে ভয়াবহ দূষণের শিকার পানিসহ জলজ প্রাণী। স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে ফসলি জমি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। জেলায় একসময় ১৮টি নদী, খাল ও বিল থাকলেও বর্তমানে টিকে রয়েছে ১০টি। নদ-নদী রক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।

বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোনাবাড়ি, হোতাপাড়া, মনিপুর কাশিমপুর, কড্ডা, বাইমাইল ও টঙ্গী এলাকা। এসব এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের মানুষ একসময় পানির চাহিদা মেটাতে তুরাগ নদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। রান্নার কাজ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ কৃষিকাজ, কাপড় ধোয়া, গোসল করাসহ প্রায় সব কাজে ব্যবহার করতেন তুরাগ নদের পানি। ওই সময় তুরাগ নদে ছিল স্বচ্ছ পানির ঢেউ। তুরাগ নদে পাওয়া যেত বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। বিচরণ করত জলজ প্রাণী। বর্তমানে গাজীপুরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পকারখানার দূষিত তরল বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে তুরাগ নদে। ফলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এ নদের পানি। বর্তমানে এ নদের পানি দূষিত থাকায় দেশি মাছসহ কোনো জলজ প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারছে না। এ ছাড়া দুর্গন্ধের কারণে তুরাগ নদের পাশ দিয়ে চলাচল করা যায় না। যার আশপাশের এলাকায় বসবাস করছেন, তাঁরা রয়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। 

গাজীপুরের কড্ডার বাসিন্দা মোতালেব মিয়া বলেন, তুরাগ নদের পানি ১০-১৫ বছর আগেও স্বচ্ছ ছিল। গাজীপুরের মানুষ তুরাগ নদের পানি কৃষিসহ প্রায় সব কাজে ব্যবহার করতেন। এখন শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্যে তুরাগ নদের পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তুরাগ নদের পানি কোথাও লাল আবার কোথাও কালো রং ধারণ করেছে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোগড়া, বাসন ও কোনাবাড়ী বিসিকসহ আশপাশের ও মৌচাক এলাকায় রয়েছে শত শত শিল্পকারখানা। এসব কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পানি কোনাবাড়ী জরুনবাইদ এলাকায় একটি খাল দিয়ে সরাসরি ফেলা হচ্ছে তুরাগ নদে। এ ছাড়া জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইমাইল ব্রিজের পাশ দিয়ে এসব বিষাক্ত বর্জ্য নামছে তুরাগ নদে।

গাজীপুরের বাইমাইল এলাকার বাসিন্দা কৃষক আফাজ উদ্দিন বলেন, তুরাগ নদের লাগোয়া বিলে তাঁদের প্রায় ১২ বিঘা জমি রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সেখানে পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে সেখানে একসময় চাষাবাদ করা হতো। এখন শিল্পকারখানার বর্জ্যে সেখানে আর চাষাবাদ কারা যাচ্ছে না। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া জানান, নদী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে চলতে পারে না। বিশেষ করে নদীর পাশে ডাইং ফ্যাক্টরি চালু থাকলে দূষণ থেকে নদী রক্ষা খুবই দুরূহ। তবে পরিবেশ রক্ষায় নিয়মিত অভিযান চলছে। যেসব শিল্পকারখানা নদ-নদীসহ পরিবেশ দূষণ করছে। ওই সব কারখানাকে জরিমানা করা হচ্ছে। তাদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নদ-নদী রক্ষায় শিল্পমালিকদের সচেতন করা হচ্ছে। এ ছাড়া দূষণকারী শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত আছে।