পৌরসভার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে গড়াইয়ের পানি

তিন বছর ধরে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ভ্যানে সংগ্রহ করা বর্জ্য নদের পাড়ে ফেলা হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার গড়াই নদে ফেলা হচ্ছে পৌরসভার বর্জ্য। গত বৃহস্পতিবার খোকসা কালীবাড়ি ঘাট এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়া খোকসা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে ফেলা হচ্ছে গড়াই নদের পাড়ে। এসব বর্জ্য নদে পড়ে গড়াইয়ের পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে মাছসহ জীববৈচিত্র্য। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, স্থায়ী ভাগাড় তৈরির পরিকল্পনা চলছে। সেটি হয়ে গেলে গড়াইয়ের পাড়ে আর ময়লা ফেলা হবে না।

পরিবেশবিদেরা বলছেন, নদকে দূষণমুক্ত করতে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা এখনই বন্ধ করতে হবে। তা না হলে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

পদ্মা নদীর অন্যতম প্রধান শাখা গড়াই নদ। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে গড়াই নদের উৎসমুখ। এ নদ মধুমতী, বলেশ্বরসহ একাধিক নাম নিয়ে সুন্দরবন এলাকায় গিয়ে পড়েছে। সেখানে লবণাক্ত পরিবেশে মিঠাপানির চাহিদা পূরণ করে গড়াইয়ের পানি। এ ছাড়া নদের তীরের লাখ লাখ মানুষের কৃষিকাজ থেকে শুরু করে জীবন–জীবিকায় ব্যবহৃত হয় এ নদের পানি।

স্থানীয় লোকজন জানান, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা সদরের পৌর এলাকার প্রধান তিনটি পয়োনিষ্কাশনের নালার মুখ গড়াই নদে পড়েছে। এতে নদের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এমনকি তিন বছর ধরে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ভ্যানে সংগ্রহ করা বর্জ্য নদের পাড়ে ফেলা হচ্ছে। এতে পৌরসভার কালীবাড়ী গড়াইঘাট এলাকায় ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ গড়ে উঠছে।প্লাস্টিকের বিভিন্ন বোতল, পলিথিনসহ নানা ধরনের অপচনশীল দ্রব্য গড়াই নদের পানি দূষিত করছে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন খোকসা কালীবাড়িঘাট এলাকায় দেখা যায়, ভ্যান নিয়ে পৌরসভার কর্মীরা বর্জ্য নদের ভেতর ফেলছেন। সেখানে আগুন জ্বালিয়ে কিছু বর্জ্য পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ধোঁয়া উড়তে দেখা যায় সেখানে। পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এ দুর্গন্ধে আশপাশে টেকা দায়। মশা-মাছির উপদ্রবও বাড়ছে।

খোকসা খেয়াঘাটের শ্রমিক রমজান আলী বলেন, নদের পাড় যেন ভাগাড় হয়ে গেছে। এখানে ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়ায়। বেশির ভাগ সময় নাকে কাপড় দিয়ে রাখতে হয়। গড়াই নদের ভাটির বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকার পানি দূষিত করছে এ আবর্জনা।

গড়াই নদের তীরের কালীবাড়িপাড়ার শ্যামল হালদার বলেন, প্রতিদিন পৌরসভার বেশ কয়েকটি ভ্যান ময়লা নিয়ে নদের ভেতরে ফেলে। তীরের ভাগাড়ের আবর্জনা পানিতে মিশে যায়। জাল ফেলার উপায় নেই। সামান্য যে পানি আছে, তার মধ্যে শুধু পলিথিন আর পলিথিন। জাল ফেললে মাছ যা ওঠে, তার চেয়ে বেশি ওঠে প্লাস্টিকের বোতল আর পলিথিন।

আবদুস সালাম নামের এক বাসিন্দা আক্ষেপ করে বলেন, পানিদূষণ হচ্ছে। এ নিয়ে কথা বলার মানুষ নেই। কে কার ব্যবস্থা নেবে, সেটিই কারও জানা নেই। তাই যে যেমনভাবে পারছে, গড়াইকে নষ্ট করছে।

খোকসা পৌরসভার মেয়র তারিকুল ইসলাম বলেন, বর্জ্য নদের পাড়ে ফেলা হচ্ছে। সেটি পানিতে পড়ছে না। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধানের জন্য ভাগাড় তৈরির জায়গা খোঁজা হচ্ছে। জায়গা পেলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুষ্টিয়া শাখার কর্মী মো. জাহিদুজ্জামান বলেন, গৃহস্থালি ও কারখানার বর্জ্য থেকে একধরনের তরল পদার্থ বের হয়, যেখানে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মিশে থাকে। যা খুবই ক্ষতিকর। পানিকেও মারাত্মকভাবে দূষণ করে। সেই পানি যদি ফসলে যায়, এরপর সেগুলো মানুষের দেহে যায়। অনতিবিলম্বে নদের পাড়ে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা উচিত। তা না হলে পরিবেশ আরও হুমকির মুখে পড়বে।