মিনহাদুজ্জামানের আয় ও স্থাবর সম্পদ দ্বিগুণ বেড়েছে

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চার ধাপের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার প্রার্থীর হলফনামা ধরে প্রতিবেদন।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান

পাঁচ বছরে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামানের বার্ষিক আয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পাঁচ বছর আগে স্থাবর সম্পদ বলতে ৬৮ দশমিক ৫৩ শতক কৃষিজমি ছিল তাঁর। ছিল না কোনো অকৃষিজমি। এখন তাঁর দ্বিগুণের বেশি কৃষিজমি, রেকর্ড পরিমাণ অকৃষিজমি ও মৎস্য খামারের মালিক হয়েছেন তিনি।

মিনহাদুজ্জামান সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছোট ভাই। ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় সোনাতলা উপজেলা নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন তিনি। ২০১৯ ও এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা পর্যালোচনা করে তাঁর বার্ষিক আয় ও স্থাবর সম্পদ বাড়ার এই চিত্র পাওয়া গেছে।

হলফনামা ঘেঁটে দেখা যায়, মিনহাদুজ্জামান স্নাতকোত্তর (এলএলএম) পাস। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে মিনহাদুজ্জামান ব্যবসা, কৃষি খাত এবং আইন পেশা থেকে সব মিলিয়ে বার্ষিক ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯০ টাকা আয় করতেন। পাঁচ বছর পর বার্ষিক আয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে এখন ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়েছে। পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ৬৮ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৬ টাকার ব্যবসার পুঁজি।

পাঁচ বছর আগে মিনহাদুজ্জামানের কোনো অকৃষিজমি ছিল না। পাঁচ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকার পর এখন তাঁর অকৃষিজমির পরিমাণ ৪৮ শতক। পাঁচ বছর আগে তাঁর কৃষিজমির পরিমাণ ২ বিঘা ৪ দশমিক ৫৩ শতক হলেও এখন ৪ বিঘা ২৭ শতক (১ একর ৬০ শতক)। পাঁচ বছর আগে তাঁর কোনো মৎস্য খামার ছিল না। এখন মৎস্য খামারে আয় ১০ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের নির্বাচনে মিনহাদুজ্জামানের কোনো মামলার কথা উল্লেখ করেননি। এবারের হলফনামায় তিনি তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা বিচারাধীন বলে উল্লেখ করেছেন।

মিনহাদুজ্জামানের হলফনামা ঘেঁটে কিছু অস্বাভাবিক ও অসামঞ্জস্য তথ্য পাওয়া গেছে, যেমন ২০১৯ সালের হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, তাঁর ইলেকট্রনিকসামগ্রী হিসেবে একটি রেফ্রিজারেটর, একটি টেলিভিশন ও তিনটি বৈদ্যুতিক পাখা আছে। এগুলোর অর্জনকালীন মূল্য ৫০ হাজার টাকা। আর এবারের হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, তাঁর একটি টেলিভিশন ও তিনটি বৈদ্যুতিক পাখা আছে। এগুলোর অর্জনকালীন মূল্য ১০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, আসবাব হিসেবে তাঁর একটি খাট, একটি ড্রেসিং টেবিল, একটি আলমারি, একটি ওয়ার্ডরোব এবং এক সেট সোফা আছে। এগুলোর অর্জনকালীন মূল্য ২০ হাজার টাকা। আর এবার হলফনামায় তিনি একই পরিমাণের আসবাব থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। এর অর্জনকালীন মূল্য আরও কম; অর্থাৎ ১০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে মিনহাদুজ্জামানের কোনো ব্যাংকঋণ ছিল না। এখন এক্সিম ব্যাংক সোনাতলা শাখায় তাঁর ঋণ ২ লাখ ১২ হাজার ৩৬১ টাকা।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর পাঁচ বছরে আয়, সম্পদ, দেনাসহ সব বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে মিনহাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী ভাতা ছাড়াও নিয়মিত সুপ্রিম কোর্ট ও বগুড়া আদালতে বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করে আয় করেছি। এ ছাড়া নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং খামারে সময় দিয়েছি। পাঁচ বছরে যেটুকু সম্পদ ও আয় বেড়েছে, তা পরিশ্রম করে বৈধ পন্থায় অর্জন করেছি। হলফনামায় সম্পদ ও আয়ের কোনো তথ্য গোপন করিনি।’

সোনাতলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মিনহাদুজ্জামান ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।