লোহার সেতু ভেঙে খালে, দুর্ভোগ 

রাঙ্গাবালী উপজেলার গহিনখালী খালের ওপরের লোহার সেতুটি মঙ্গলবার ভেঙে পরেছে। এতে খালের দুই পাড়ের হাজারো মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালী খালের ওপর নির্মিত লোহার সেতুটি গতকাল ধসে পড়ে
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালী খালের ওপরের লোহার সেতুটি ভেঙে পড়েছে। ইউনিয়নের গহিনখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন পুরোনো এই লোহার সেতু মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কোনো এক সময় মধ্যখানে ভেঙে খালে পড়ে যায়। সেতুটি ভেঙে পড়ায় ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালী ও সদর ইউনিয়নের পূর্ব বাহেরচর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে সেতুর পূর্ব অংশের শিশুশিক্ষার্থীদের স্কুলে এসে-যেতে নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। সেতু ভেঙে খালে পড়ে থাকায় জেলে ট্রলার ও নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।  

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙ্গাবালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অর্থায়নে লোহার সেতুটি ১০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের মোল্লার বাজার এলাকার একটি ভাঙা লোহার সেতুর মালামাল ব্যবহার করে ছোট বাইশদিয়ার গহিনখালী ও রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়নের পূর্ব বাহেরচরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গহিনখালী খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছিল ৩ লাখ টাকা। লোহার সেতুটির পাটাতন কংক্রিটের ঢালাই ছিল। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৫ মিটার এবং প্রস্থ ২ দশমিক ১৪ মিটার। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, নির্মাণের এক বছরের মধ্যেই একটি ট্রলারের ধাক্কায় সেতুটি এক পাশে কাত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সেতুর ওপর দিয়ে ছোট যানবাহনসহ এলাকার লোকজন পারাপার হয়ে আসছিল। 

গত মঙ্গলবার সেতুটি ভেঙে পড়ায় ছোট বাইশদিয়ার গহিনখালী গ্রামের সঙ্গে গহিনখালী পূর্ব অংশের সঙ্গে  রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়নের পূর্ব বাহেরচর এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিশুশিক্ষার্থীরা। 

সেতুর পশ্চিম পাড়ে ছোট বাইশদিয়ার গহিনখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল বারেক জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে কোনো এক সময়ে সেতুটি মধ্যখানে ভেঙে খালে পড়ে যায়। ভোরে স্থানীয় লোকজন দেখতে পান সেতুটি ভেঙে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের ২০৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সেতুর পূর্ব পাড়ের গহিনখালীর একটি অংশ ও পূর্ব বাহেরচর এলাকার অন্তত ২০টি শিশু রয়েছে। সেতু ভেঙে পড়ায় ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা চিন্তিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আমরা ও অভিভাবকেরা মিলে খাল পারাপারের জন্য একটি ছোট নৌকার ব্যবস্থা করেছি। এখন শিশুরা ওই নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করছে। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।’  

গহিনখালী সেতুসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মাহামুদ হাসান বলেন, গহিনখালী ও সদর ইউনিয়নের পূর্ব বাহেরচর এলাকার লোকজন এই সেতু দিয়ে চলাচল করে আসছিল। সেতু ভেঙে পড়ায় এখান ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদর, গহিনখালী লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। দ্রুত সেতুটি মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানান। 

স্থানীয় জেলে হারুন মাঝি জানান, পূর্ব দিকে বুড়াগৌরাঙ্গ নদ ও পশ্চিমে দাড়ছিড়া নদী এবং আগুনমুখা নদী। বিশেষ করে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের জেলেরা তাঁদের নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নদে মাছ ধরে এই খাল দিয়ে উপজেলার  বাহেরচর বাজারে আসা-যাওয়া করেন। এ ছাড়া উপজেলা সদর থেকে মালামাল নিয়ে উপজেলার চর মোন্তাজ ইউনিয়নে মালামাল নিয়ে ট্রলারগুলো এই খাল দিয়ে যাতায়াত করে। সেতু ভেঙে খালে পড়ে থাকায় এই নৌপথও বন্ধ হয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় সেতুর ভেঙে পড়া অংশ খাল থেকে অপসারণ করে নৌপথটি সচল করার দাবি জানান নৌপথের চলাচলকারীরা। 

এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আসলে সেতুটি অনেক পুরোনো। ট্রলারের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল সেতুটি। সেতু নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।’