মাদারীপুরে মহাসড়ক আটকে তিন ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ, অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মহাসড়ক আটকে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সদর উপজেলার মস্তফাপুর গোলচত্বরে বিরতিহীনভাবে এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ করে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ছয়টি দোকান ও চারটি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সংঘর্ষের কারণে মাদারীপুর-চাঁদপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে তীব্র যানজট তৈরি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রী ও যানচালকেরা।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মস্তফাপুর গোলচত্বর এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হাবিব হাওলাদার, ইদ্রিস হাওলাদারের সঙ্গে শামচু সরদার ওরফে কোপা শামচুর আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি একটি বিস্ফোরক মামলায় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন শামচু সরদার। তিনি জামিনে বের হয়ে হাওলাদার বংশের এক কিশোরকে আজ সকালে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এরই জেরে দুপুরে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ করে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ছয়টি দোকান ও চারটি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তাঁদের লক্ষ্য করে কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে স্থানীয় বিএনপির নেতারা ও কৃষক দলের সদস্যসচিব অহিদুজ্জামান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
সংঘর্ষে আহত ১০ জনকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে হানিফ সরদার (২৬) নামের একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং জুবায়ের হাওলাদারকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিকেল পাঁচটার দিকে মস্তফাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মস্তফাপুর গোলচত্বরের পূর্ব দিকে হাওলাদার বাড়ি। সেই বাড়িতে হামলা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর হাওলাদার বাড়ির লোকজন একত্র হয়ে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছেন মস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে উত্তর-পূর্ব দিকে সরদার বাড়িতে। উভয় পক্ষের লোকজনের হাতে টেঁটা, বল্লম, ফলা, সড়কি, কাতরা, রামদা দেখা যায়।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য হাবিব হাওলাদার বলেন, ‘শামচু সরদার এলাকায় সন্ত্রাসীদের লালন পালন করেন। তাঁর কারণেই আজ এই রণক্ষেত্র। তিনি নিজে বোমা তৈরি করেন, মাদকের ব্যবসা করেন। তাঁকে ধরতে পুলিশও ভয় পায়। তাঁর বিরুদ্ধে খুন, মাদক, ডাকাতিসহ ১২টি মামলা আছে। সম্প্রতি র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। জামিনে বের হয়েই শামচু আমাদের হুমকি দিতে থাকেন। আজ শামসু তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালালে আমাদের লোকজন তা প্রতিহত করেন।’
অভিযোগ অস্বীকার করে শামচু সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাওলাদার বংশের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করেছে। বিষয়টি পুলিশকে বলেছি। পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁদের পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফারিহা রফিক ভাবনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মস্তফাপুরে হাওলাদার ও সরদার দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। আমাদের সঙ্গে পুলিশ, র্যাব, ডিবি ও সেনাবাহিনী আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। মহাসড়কের যানবাহন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ট্রাফিক পুলিশ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে থেমে থেমে বাস চলছে। মাদারীপুর-চাঁদপুর-শরীয়তপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যা ছয়টার পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা পুলিশের দিকে হাতবোমা নিক্ষেপ করে। তারা কেউ আইন মানছে না। পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে শান্ত থাকতে বলেছে। এ ঘটনায় যারা দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে, যারা হামলা–ভাঙচুর করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।