সরগরম ঘাটে হঠাৎ সুনসান নীরবতা

পিরোজপুরের কচা নদীর বেকুটিয়া ফেরিঘাটের বয়স ২৮ বছর। এ ঘাট দিয়ে বরিশাল-খুলনাসহ বিভিন্ন পথের পরিবহন ও মালবাহী গাড়ি চলাচল করত। ফেরিঘাট এলাকা সব সময় ছিল সরগরম। কচা নদীর ওপর নির্মিত সেতু উদ্বোধনের পর বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। ঘাটে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। ফেরিঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছেন মালিকেরা।

গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিন বেকুটিয়া ফেরিঘাটের পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমিরমারা প্রান্তে দেখা গেছে, খাবারের হোটেলের মালিক কবির শেখ হোটেলের মালামাল গুছিয়ে রিকশাভ্যানে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পাশে থাকা মো. ফোরকানও তাঁর খাবারের হোটেল বন্ধ রেখেছেন। ওই এলাকায় থাকা চারটি খাবারের হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। একসময় যানবাহন ও মানুষের ভিড়ে ব্যস্ত থাকা ফেরিঘাটটি লোকশূন্য হয়ে পড়েছে। সড়কে নেই গাড়ি।

কবির শেখ বলেন, ১৯৯৪ সালে বেকুটিয়া ফেরিঘাট চালু হয়। ২১ বছর ধরে তিনি খাবারের হোটেল চালাচ্ছেন। গত রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কচা নদীর ওপর সেতুর উদ্বোধন করেন। রাত ১২টার পর সেতু দিয়ে যানবাহন চলাল শুরু করে। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে সর্বশেষ ফেরি চলে। পরের দিন সোমবার সকাল থেকে ঘাটে কোনো ভিড় নেই। বাধ্য হয়ে হোটেল বন্ধ করে দিয়েছেন সবাই।

খাবার হোটেলের মালিক মো. ফোরকান বলেন, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বেচাবিক্রি ছিল। ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ ঘাটে মানুষ নেই। তাই হোটেলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য কিছু দোকান চালু থাকলেও তাঁরা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।

ফেরিঘাটের চায়ের দোকানদার মো. বায়েজিদ আহমেদ বলেন, ফেরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। আগে লোকজনের ভিড়ে দম ফেলার সময় পাওয়া যেত না।

বেকুটিয়া ফেরিঘাটের মাছ বিক্রেতা কালাম শেখ বলেন, ‘আমার বেশির ভাগ ক্রেতা ছিলেন ফেরিতে চলাচল করা মানুষ। গাড়ি যখন ফেরির জন্য অপেক্ষা করত, তখন অনেকে ঘাটে নেমে কচা নদীর তাজা ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ কিনে বাড়ি যেতেন। এ ঘাটে রাতে ইলিশের জমজমাট হাট বসত। এখন মাছের দোকানটি সেতু এলাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে ফেরিঘাটের মতো বেচাকেনা সেতুর পাশে হবে না। সেতু দিয়ে গাড়ি চলার সময় তো থামার সম্ভাবনা নেই।’

বেকুটিয়া ফেরিঘাটের ইজারাদার ও সদর উপজেলার শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমির হোসেন মাঝি বলেন, ‘ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেরিঘাট জনশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে ফেরিঘাটের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখানের সবাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সরকারের কাছে আমরা এসব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর পুনর্বাসন ও প্রণোদনার দাবি জানাই।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন ঘোষণার পরপরই শুধু হেঁটে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেতু। রোববার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে যান চলাচল শুরু হয়।

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ওই বছরের ১৮ জুলাই সেতুর কাজ শুরু করে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯৩ মিটার ও প্রস্থ ১৩ দশমিক ৪০ মিটার। চীন সরকার এ সেতু নির্মাণে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য প্রদান করেছে এবং বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করেছে ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা। সেতুটি নির্মাণের ফলে বরিশাল বিভাগের সঙ্গে খুলনা বিভাগের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।