দূরে গিয়ে ধূমপান করতে বলায় কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে নিহত কিশোরের পরিবারকে চাপ দিয়ে লাশ দাফনের চেষ্টা চলছিল। খবর পেয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় দূরে গিয়ে ধূমপান করতে বলায় ক্ষুব্ধ হয়ে মো. সালমান (১৭) নামের এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নিহত কিশোরের পরিবারকে চাপ দিয়ে লাশ দাফনের চেষ্টা করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ক্যানেলপাড় এলাকায় ওই কিশোর পিটুনির শিকার হয়। শুক্রবার ভোরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। নিহত সালমান খুলনার জিনারতলা গ্রামের ভ্যানচালক মোফাজ্জল মিয়ার ছেলে। তাঁরা সপরিবার কুতুবপুর ইউনিয়নের চিতাশাল কুসুমবাগ এলাকায় শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

নিহত কিশোরের মা খুকু বেগম সাংবাদিকদের জানান, গতকাল রাত ৯টার দিকে ক্যানেলপাড় এলাকার সাদ্দামের চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সালমান। তখন জাহিদ নামে স্থানীয় এক ছেলে সেখানে সিগারেট জ্বালান। সালমান তাঁকে দূরে গিয়ে সিগারেট খেতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাহিদ দলবল নিয়ে সালমানকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ফেলে যান। সেখান থেকে কোনোমতে বাসায় চলে আসে সালমান। ভোর চারটার দিকে অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সালমান মারা যায়।

খুকু বেগম বলেন, আজ বেলা ১১টার দিকে কুতুবপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জামান তাঁর স্বামীকে ফোন করে বলেন, ‘ছেলে নেশাপানি খেয়ে মারা গেছে। থানা-পুলিশ করলে লাশ নিয়ে যাবে, কাটাছেঁড়া করব। ছেলে মারা গেছে, সে তো আর ফিরে আসবে না। লাশটা দাফন করে ফেলো। পরে যাদের সঙ্গে মারামারি হয়েছে, তাঁদের ডেকে মীমাংসা করে দেব।’ তখন স্বামী কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা তুলে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। এমন সময় পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

ঘটনার পর অভিযুক্ত জাহিদ আত্মগোপনে চলে গেছেন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে নিহত কিশোরের বাবাকে ফোন করে এক ছেলে আমাকে ধরিয়ে দেয়। তখন আমি কথা বলে বিষয়টি জেনেছি।’ জামান দাবি করেন, ‘আমি তাঁকে বলেছি, আপনার ছেলে হারিয়েছেন, আপনি চাইলে মামলা করতে পারেন, যা কিছু তাই করতে পারেন। আমি তাঁকে মীমাংসার জন্য চাপ দিইনি। পরে শুনেছি, পুলিশ এসে লাশ নিয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, কী কারণে মারামারি হয়েছে, মারা গেছে, তিনি কিছুই জানেন না।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম প্রথম আলোকে বলেন, মারধরে কিশোরের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছেন। তবে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। নিহত কিশোরের লাশ দাফনের আগে গোসল করানোর সময় শোনা যায়, বন্ধুদের সঙ্গে মারামারিতে মারা গেছে। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।