জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলে র‍্যাব আরও কঠোর হবে: র‍্যাবের মহাপরিচালক

কক্সবাজারে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন র‍্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সোমবার দুপুরে ইন্টারন্যাশনাল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক কনভেনশন হলে
ছবি: প্রথম আলো

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে র‍্যাব আরও কঠোর হবে বলে মন্তব্য করেছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। আজ সোমবার দুপুরে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ইন্টারন্যাশনাল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক কনভেনশন হলে আয়োজিত ২১ দিনব্যাপী ‘নবজাগরণ’ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা হয়েছে। অপরাধীদের ভালো রাস্তায় ফিরে আসার সুযোগও রাখা হয়েছিল। স্বাভাবিক জীবনে ফিরেও এসেছেন অনেকে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে র‍্যাব আরও কঠোর হবে।

সুন্দরবন এখন দস্যুমুক্ত জানিয়ে র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেন, গত চার বছরে সুন্দরবনে ডাকাতি, লুটের ঘটনা ঘটেনি। সুন্দরবনের আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের নানাভাবে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। সুন্দরবনে বাঘ-হরিণের সংখ্যা বাড়ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় লাখ লাখ পর্যটক সেখানে ভ্রমণে যাচ্ছেন। কক্সবাজারের দিকেও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। কারণ, প্রতিবেশী দেশ থেকে ইয়াবার চালান ঢোকে কক্সবাজারে। প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা ধরাও পড়ছে। যুবসমাজ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে বিপথগামী হচ্ছে। তাই সব ধরনের অসংগতি ও অপরাধকে না বলতে কক্সবাজার থেকেই শুরু হলো র‍্যাবের ‘নবজাগরণ’ কর্মসূচি।

কর্মশালায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদন করে না। দেশে ইয়াবা-ফেনসিডিলও তৈরি হয় না। প্রতিবেশী দেশ থেকেই মাদকদ্রব্য দেশে ঢোকে এবং দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের পাশাপাশি কিশোর গ্যাং নির্মূলেও ভূমিকা রাখছে র‍্যাব। অপরাধের ঝুঁকিতে আছে, এমন মানুষকে নিয়েই আজকের এ কর্মশালা।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল মো. কামরুল হাসান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ইমতিয়াজ আহমেদ। এতে বক্তব্য দেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক খায়রুল ইসলাম সরকার, সায়মান বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব রহমান, প্রশিক্ষণার্থী অটোরিকশাচালক নুরুল আমিন, জান্নাতুল বকেয়া প্রমুখ।

র‍্যাব-১৫-এর অধিনায়ক খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, গত এক বছরে র‍্যাব কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬৮ লাখ ইয়াবা, ১৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ-আইসসহ ৪৫৭ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে। ১৪টি বিদেশি অস্ত্রসহ ১০৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলার ৯৮৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ও ইয়াবা কক্সবাজারকে অপরাধজগতে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছে। ‘নবজাগরণ’ কর্মসূচি এখান থেকে শুরু হওয়া জরুরি ছিল।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া নারীদের সঙ্গে কথা বলেন র‍্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে উগ্রবাদের ঝুঁকি আছে। র‍্যাব হতাশাগ্রস্ত লোকজন খুঁজে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা ভালো উদ্যোগ।

সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া ব্যক্তি, বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারী অপরাধপ্রবণ লোকদের চিহ্নিত করে তাঁদের স্বাবলম্বী করার প্রয়াস নিয়ে ‘নবজাগরণ—অপরাধকে না বলুন’ শীর্ষক তিন সপ্তাহব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করেছে র‍্যাব-১৫। কর্মশালায় কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মচারী, লাইফগার্ড, ট্যুর অপারেটরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক তরুণ-তরুণী অংশ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের বিভিন্নভাবে পুনর্বাসনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মশালা আয়োজনে সহায়তা দিচ্ছে সায়মান বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ।