বেঁচে উঠবে বিশ্বাসে নারীর লাশ ৭ দিন ঘরে রেখে দেন স্বজনেরা

লাশ
প্রতীকী ছবি

নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাড়ি থেকে কয়েক দিন ধরে দুর্গন্ধ ভেসে আসছিল। ওই বাড়ির সদস্যরাও দরজা-জানালা বন্ধ রেখে রহস্যজনক আচরণ করছিলেন। এ কারণে দুর্গন্ধের উৎস খুঁজে বের করতে পারছিলেন না প্রতিবেশীরা।

বাধ্য হয়ে তাঁরা জনপ্রতিনিধি ও থানা-পুলিশে খবর দেন। এরপর ওই বাড়ির গেটের তালা ও ঘরের দরজা ভেঙে এক নারীর পচে–গলে বিকৃত হয়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। মারা যাওয়া নারীর নাম শামীমা সুলতানা ওরফে নাজমা (৫৫)। তিনি মনোহরদী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদারের (৬৮) স্ত্রী। ওই নারীর স্বামী, চার মেয়ে ও তিন নাতিকে থানায় নিয়েছে পুলিশ। তাঁরা সবাই ওই বাড়িতে ছিলেন।

পুলিশ বলছে, ধারণা করা হচ্ছে অন্তত সাত দিন আগে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ওই বাড়ির সব সদস্য ফরিদপুরের এক পীরের মুরিদ। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, লাশ এভাবে ছয় থেকে সাত দিন রেখে দিলে মৃত শামীমা জীবিত হয়ে উঠবেন।

এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বলা যাবে ওই নারীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, না কি এটি হত্যাকাণ্ড।

কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, কয়েক দিন ধরে বাড়িটি থেকে দুর্গন্ধ আসছিল। দুর্গন্ধের মাত্রা বাড়তে থাকায় এর উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছিল। গতকাল বিকেলে পার্শ্ববর্তী বাড়ির শৌচাগার পরিষ্কার করতে গিয়েছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। দুর্গন্ধের চোটে তাঁরা কাজ না করেই ফিরে আসেন। এরপর প্রতিবেশীরা ওই বাড়ির সদস্যদের ডাকাডাকি করলেও তাঁরা সাড়া দিচ্ছিলেন না। বাধ্য হয়ে গতকাল রাত আটটার দিকে ওই এলাকার বাসিন্দারা জেলা পরিষদের সদস্য ইসরাত জাহানকে বিষয়টি জানান। তিনি থানায় জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে।

জেলা পরিষদের সদস্য ইসরাত জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়িটির সদস্যদের আচরণ রহস্যজনক। তাঁরা অসামাজিক। তাঁরা সব সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে বাড়িটিতে অবস্থান করেন। কারও সঙ্গে দেখা করতেন না, কথাও বলতেন না। গতকাল রাত ৯টার দিকে পুলিশসহ আমরা যখন বাড়িটিতে যাই, তখনও তাঁরা গেট খুলছিলেন না, ছাদও ছিল তালাবদ্ধ। এ সময় তাঁরা নানা রকম উল্টাপাল্টা কথা বলছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অনুরোধ করে কাজ না হওয়ায় গেটের তালা ভাঙে পুলিশ। ওই সময় তাঁরা ঘরের ভেতরের দরজাও ভেতর থেকে বন্ধ করে দেন। তখন দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখা যায়, খাটের নিচে তোষকে মোড়ানো নারীর লাশ। তীব্র দুর্গন্ধের মধ্যেই তিন শিশুসহ তাঁরা আটজন সেখানে অবস্থান করছিলেন।’

মনোহরদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার ভোরে মারা যান শামীমা সুলতানা। এর পর থেকে লাশটি একটি তোশকে পেঁচিয়ে খাটের নিচে রেখে ঘরটিতে অবস্থান করছিলেন তাঁরা। এর মধ্যে লাশ পচে-গলে বিকৃত হয়ে গেছে ও পোকায় ধরেছে। এতেও ভ্রুক্ষেপ ছিল না তাঁদের। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে এত দিন ধরে লাশ ঘরে রেখে দেওয়ার ঘটনায় এটি স্বাভাবিক মৃত্যু কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ওই বাড়ির লোকজন দাবি করেছেন যে তাঁরা দুর্গন্ধ টের পাননি। লাশ উদ্ধারের সময় তাঁদের খাবার টেবিলে রান্না করা খাবার ছিল। তাঁদের আচরণও স্বাভাবিক ছিল।