খাগড়াছড়িতে ঝড়ের পর উদ্ধার কাজে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর মৃত্যু

টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে খাগড়াছড়িতে ডুবে গেছে বিভিন্ন সড়ক। ছবিটি আজ সকালে মহিলা কলেজ সড়ক থেকে তোলাছবি: প্রথম আলো

খাগড়াছড়িতে ঝড়ের পর ভেঙে পড়া গাছের ডাল সরাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে এক ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর নাম রাসেল হোসেন (২১)। তিনি গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে জেলার আলুটিলা এলাকায় গাছের ভেঙে পড়া ডাল সরানোর কাজ করছিলেন। নিহত রাসেল ঢাকার ধামরাই উপজেলার আবদুল রাজ্জাকের ছেলে।

খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আলুটিলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে। সেগুলো কাটার সময় ৩৩ হাজার ভোল্টের তারের সঙ্গে লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন রাসেল। তাকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁর মরদেহ পরিবারের কাছে পাঠানো হবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দুই দিনের টানা বর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রবল বাতাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এতে গতকাল সোমবার থেকে জেলা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। ঝোড়ো বাতাসের কারণে গতকাল দুপুরের পর থেকে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টির কারণে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতাও। দুই দিনের বর্ষণে খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলার চেঙ্গী নদী, খাগড়াছড়ি ছড়া ও মধুপুর ছড়ার পানি বেড়ে আশপাশের এলাকা প্লাবিত করেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে শহরের নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত মুসলিমপাড়া, কলেজ গেট, কালাডেবা, বটতলী, গঞ্জপাড়া, ফুটবিল, এপিবিএন, মিলনপুর, খবংপুড়িয়াসহ কয়েকটি এলাকায় রাস্তা ও বাড়িঘর ডুবে গেছে।
টানা বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পাহাড়ধসের ঝুঁকি। জানমাল রক্ষায় এবং পাহাড়ধসের আশঙ্কায় গত রোববার সকাল থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জেলা শহরে মাইকিং করা হয়। তবে মাইকিংয়ের কথা কানে নিচ্ছে না কেউ। শহরের বিভিন্ন এলাকায় হাজারো পরিবার পাহাড়ধসের ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে না কেউ।

সোমবার দুপুরে কথা হয় ন্যান্সিবাজার এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা লোকমান হোসেনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, সামান্য বৃষ্টি হলে ভয় লাগে। তবে বাড়িতে হাঁস-মুরগি রয়েছে। এগুলো নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া যাবে না। তা ছাড়া চুরি হওয়ার ভয় রয়েছে। তাই প্রয়োজনে সারা রাত না ঘুমিয়ে বসে থাকবেন। তারপরেও আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন না।

পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়িঘর। যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ছবিটি শালবন এলাকা থেকে আজ সকালে তোলা
ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের ওপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশনার পাশাপাশি মাইকিং করা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জরুরি রেসপন্সের জন্য আমরা কন্ট্রোল রুম খুলেছি। পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ে ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে তা আরও বাড়ানো হবে।’

খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, সোমবার সন্ধ্যার দিকে কয়েকটি এলাকায় পানি ওঠায় কিছু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের পানি ও খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।