দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমানকে হত্যার প্রতিবাদে আজ বিরিশিরি ফেরিঘাটের ভবানীপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমানকে (৫৭) হত্যার প্রতিবাদে এবং এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ রোববার উপজেলার বিরিশিরি ফেরিঘাটের ভবানীপুর এলাকায় এলাকাবাসীর ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

আজ দুপুর ১২টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি চলে। এ সময় মজিবর রহমান হত্যা মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন দুর্গাপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুর রশিদ মোড়ল, সাবেক কাউন্সিলর ইদ্রিস আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল হান্নান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি বাবুল শেখ, নিহত মজিবরের স্ত্রী আছিয়া খাতুন, ছেলে মো. রাজন, কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ, বিরিশির ইউপির সাবেক সদস্য মো. রবিকুল প্রমুখ। এ ছাড়া মজিবর রহমান হত্যার বিচার দাবিতে বিরিশিরি ফেরিঘাটের ভবানীপুর এলাকায় সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁর সমর্থকেরা।

মজিবর রহমান দুর্গাপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিরিশিরি ইউনিয়নের নলজোরা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মজিবর রহমানের সঙ্গে কুল্লাগড়া ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. আবদুল আওয়াল ও তাঁর ভাই মো. শামিম মিয়া (৩৩) ওরফে ‘শুটার’ শামিম, মো. বদিউজ্জামানের (৪২) মধ্যে সীমান্তে চোরাচালান ব্যবসা, এলাকায় আধিপত্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। কিছুদিন আগে সীমান্তে চোরাচালান ব্যবসা করতে বাধা দেওয়ায় আবদুল আওয়াল ও তাঁর ভাইদের হামলায় ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর কুল্লাগড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা সুব্রত সাংমা (৪৫) নিহত হন।

এলাকাবাসী সূত্র জানায়, সুব্রত সাংমার হত্যার বিচারের দাবিতে তাঁর পরিবারের পক্ষে মজিবর রহমান অবস্থান নেন। এতে আবদুল আওয়ালদের সঙ্গে তাঁর (মজিবর) বিরোধ চূড়ান্ত রূপ নেয়। এর জেরে গত ২২ আগস্ট মজিবরের ছোট ভাই যুবলীগের কর্মী মো. নূরনবীর ওপর আওয়াল বাহিনী হামলা চালায়। ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে মজিবর রহমানের ভাতিজা সরকারি সুসং ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র খায়রুল ইসলাম কলেজে যায়। এ সময় তাকে আবদুল আওয়ালের ছেলে মো. আবির মারধর করে। কিছুক্ষণ পর খায়রুল তার বন্ধুদের নিয়ে এলে আবিরের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবদুল আওয়ালের ছোট ভাই মো. শামিম মিয়া লোকজন নিয়ে মজিবর রহমানের ওপর হামলা চালান।

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমান হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে আজ বিরিশিরি ফেরিঘাটের ভবানীপুর এলাকায় মানববন্ধন করে এলাকাবাসী
ছবি: প্রথম আলো

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতিপক্ষের হামলায় মজিবর, তাঁর ছেলে কুল্লাগড়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মো. রাজন, মো. ছাব্বির, স্বজন ফারুক মিয়া, মো. নাঈম মিয়া, বাদল মিয়াসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। গুরুতর আহত মজিবর রহমানকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে নিয়ে গেলে সেখানেও প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালান। পরে জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসা কর্মকর্তা রকিবুল হাসান মজিবরকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ৮ ফেব্রুয়ারি মজিবরের ছেলে মো. রাজন বাদী হয়ে শামিম মিয়াসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ছয়জনকে।

বাদী মো. রাজন দাবি করে বলেন, ‘শুটার শামিম তার দলবল নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। আব্বাকে কোপানোসহ গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শামিম ও তার ভাইয়েরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব বিস্তার করেছে। তারা ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত সাংমাকে হত্যা করেছে। তাদের তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, অস্ত্র, চোরাচালানসহ প্রায় ৬৭টি মামলা রয়েছে। তাদের ভয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করে না। আমরা প্রতিবাদ করায় আমাদের মারধরসহ বাবাকে হত্যা করেছে।’

জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চন্দ্র দেব প্রথম আলোকে বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় মজিবর রহমান নিহত হয়েছেন। মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ জানান, যিনি মারা গেছেন, তাঁর নামে ১২টি মামলা রয়েছে। আর ‘শুটার’ শামিমের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত খুন, মাদক, অস্ত্র, নাশকতা, সীমান্তে চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত ২৫টি, তাঁর বড় ভাই আবদুল আওয়ালের নামে ২৪টি ও বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে।