নারায়ণগঞ্জে নিয়াজুলের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করল জেলা ম্যাজিস্ট্রেট

নারায়ণগঞ্জে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলার সময় অস্ত্র হাতে নিয়াজুল ইসলাম। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি
ফাইল ছবি

পাঁচ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর সশস্ত্র হামলার সময় প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে ধরা নিয়াজুল ইসলামের সেই অস্ত্রের লাইসেন্স (নিবন্ধন) বাতিল করা হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদুল হক তাঁর অস্ত্রের লাইসেন্সটি বাতিল করেন।

আজ রোববার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে প্রথম আলো। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র আইনের নীতিমালা লঙ্ঘন করায়, পুলিশি প্রতিবেদনের আলোকে নিয়াজুলের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

নিয়াজুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ হেফাজতে থাকা তাঁর অস্ত্রের লাইসেন্সের নবায়ন চেয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করেছিলেন নিয়াজুল। ওই সময় তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মতামত জানতে চেয়ে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারকে চিঠি দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। জবাবে অস্ত্রটি নবায়ন না করার জন্য মতামত দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রতিবেদন দিয়েছিল পুলিশ। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অস্ত্রটির লাইসেন্স নবায়ন করা হলে তা ব্যবহার করে নিয়াজুল যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারেন।

আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ছয় বছর আগে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিয়াজুলের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। অস্ত্রটি পুলিশের কাছে জব্দ থাকায় এটির লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছিলেন না। এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেন।

নিয়াজুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ৩০ দিনের মধ্যে নিয়াজুলের অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়নের আবেদনের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য জেলা প্রশাসককে আদেশ দেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন নির্দেশনা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর। চলতি বছরের ২৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীতিমালা অনুযায়ী নিয়াজুলের অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশনার আলোকে চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর নিয়াজুলের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যুতে মেয়র আইভী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হকার ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অনুসারীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। ওই হামলায় মেয়র আইভীসহ অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মী-পুলিশ-সাংবাদিকসহ আহত হন। ওই সময় শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নিয়াজুলকে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি হয়।

ঘটনার পর দিন নিয়াজুল অস্ত্র ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মেয়র আইভীর কিছু সমর্থকদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনার ছয় দিন পর মেয়র আইভীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে অস্ত্রধারী নিয়াজুলসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু দুই পক্ষের কারও মামলা না নিয়ে সদর মডেল থানা পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয়ে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

নিয়াজুলের খোয়া যাওয়া অস্ত্রটি ঘটনার ৯ দিন পর ২৫ জানুয়ারি প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের সাধু পৌলের গির্জার সামনে থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেটি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় জব্দ আছে। ওই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসীম উদ্দিন হায়দারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হলেও গত ৫ বছরেও তা আলোর মুখ দেখেনি।