আনোয়ারুজ্জামানের পর সিলেটে মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন মিসবাহ উদ্দিন

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন মিসবাহ উদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে
ছবি : প্রথম আলো

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আট নেতার মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ মেয়র পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা পাঁচটার দিকে সিলেটের দ্বিতীয় বার হলে জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক বাজেট সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সিলেটের সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে দুপুরে নগরের মাছিমপুর এলাকায় পাঁচ হাজার নারীর মধ্যে শুভেচ্ছাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনি মেয়র পদে প্রার্থিতার বিষয়টি পুনরায় ঘোষণা করেন। তখন মঞ্চে সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের দুই নেতার সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তৃতার পরপরই দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। দলটির একাধিক কর্মী জানিয়েছেন, ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ফলে সহজে জয় পেতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেক নেতা মাঠে তৎপর আছেন।

প্রতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। করোনাভাইরাসে ২০২০ সালের ১৫ জুন মারা যান তিনি। বর্তমানে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও মিসবাহ উদ্দিন ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের ছয় নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। তাঁরা হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসান ও আজাদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ ও সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। তাঁরা নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

আইনজীবী সমিতির সভায় মিসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চাই।’

মিসবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকারী খন্দকার মোশতাক আহমেদ সিলেটে এলে তাঁকে গণপিটুনি দেওয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। এ কারণে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ১৭ মাস জেল খেটেছি। দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছি। এ ছাড়া মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক দিন ধরে কাজ করছি। তবে যেহেতু আমি দল করি, তাই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

দুপুরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে নারীদের মধ্যে শুভেচ্ছাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এ অনুষ্ঠানে জেলা এবং মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত না থাকলেও দল ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

‘শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

এ সময় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যদি আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দিয়ে পাঠান, আপনাদের আমি একটা কথা বলতে চাই, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে এই সিলেট সিটি করপোরেশনকে সাজাব। সিটি করপোরেশনকে আমি ক্লিন ও গ্রিন করব। এ ছাড়া সিলেটকে প্রথম স্মার্ট সিটি বানাব।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর অনুসারীরা প্রচারণা চালিয়েছেন। এ খবর চাউর হওয়ার পর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ক্ষুব্ধ নেতাদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে মহানগরে কাজ করে চলা নেতাদের বাদ রেখে ‘হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসা’ কাউকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূলে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।

আওয়ামী লীগের দুই নেতার প্রার্থিতা ঘোষণার বিষয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে দলের যে কেউ মনোনয়ন চাইতেই পারেন। গত সিটি নির্বাচনে আমিও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আগামী নির্বাচনেও আমি দলীয় মনোনয়ন চাইব। নির্বাচনে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কাজ করছি।’