এক বোনের গানের সঙ্গে তবলা বাজান আরেক বোন
প্রিয়ঙ্কা দের বয়স ২৭, প্রিয়তা দের ২৫ বছর। তাঁরা দুই বোন। একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এক বোন গান গাওয়ার সময় সঙ্গে তবলা বাজান আরেক বোন। এভাবে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন তাঁরা। যেকোনো অনুষ্ঠানে তাঁদের গান-তবলার যুগল পরিবেশনা শুনে অনেকে প্রশংসা করেন।
প্রিয়ঙ্কা–প্রিয়তা যশোরের কেশবপুর উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী মানিক দে ও গৃহিণী বনলতা দের মেয়ে। প্রিয়ঙ্কা দে ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান করতেন। প্রিয়তা দে গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রিয়ঙ্কা-প্রিয়তা গত ২২ জানুয়ারি একসঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছেন। প্রিয়ঙ্কা বেলকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রিয়তা ডোঙাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।
প্রিয়ঙ্কা-প্রিয়তার সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয়। এ সময় তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, মা–বাবা চাইতেন, তাঁরা যেন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেন। ছোটবেলা থেকে সংগীতের প্রতি তাঁদেরও আগ্রহ ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুই বোন গানবাজনা করতেন। শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁদের সুখ্যাতি ছিল। অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন। সঙ্গে চালিয়ে গেছেন লেখাপড়া।
গত সোমবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেশবপুর পৌরসভা চত্বরে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের উদ্যোগে ‘গুরুবন্দনা’ নামের অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি, রবীন্দ্রনাথের গান ও নৃত্য পরিবেশনা চলে রাত ১১টা অবধি। অনুষ্ঠানের একপর্যাযে মঞ্চে ঘোষণা করা হয়, ‘আমরা এখন শুনব এক বোনের গলায় রবীন্দ্রনাথের গান। তাঁর সঙ্গে তবলায় সংগত করবেন আরেক বোন।’ গান শেষ হলে করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেশবপুরের নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটা সত্যিই ব্যতিক্রম যে এক বোন গান গাওয়ার সময় অন্যজন তবলা বাজান। গানটি যেমন প্রাণ ছুঁয়েছে, তেমনি তবলাও ভালো লেগেছে।
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের কেশবপুর শাখার আহ্বায়ক উজ্জ্বল ব্যানার্জী বলেন, সাধারণত মেয়েদের তবলা বাজাতে দেখা যায় না। ওই দুই বোন প্রকৃত শিল্পী। তাঁদের প্রতিভা রয়েছে। আশা করি, তাঁরা আরও ভালো করবেন।’
ছোটবেলা থেকেই প্রিয়ঙ্কা-প্রিয়তার সংগীত ও তবলা বাজানোর প্রতি আগ্রহ ছিল জানিয়ে তাঁদের মা বনলতা দে প্রথম আলোকে বলেন, দুই মেয়েকে গানবাজনা শেখানোর ব্যাপারে তিনি ও তাঁর স্বামী উৎসাহী ছিলেন। প্রিয়ঙ্কা তাঁর কাছে দাবি করেছিলেন, ক্লাস ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলে যশোরের প্রখ্যাত সংগীত শিক্ষক অর্ধেন্দু ব্যানার্জির কাছে গান শেখাতে হবে। বৃত্তি পাওয়ার পর দুই বছর ওই সংগীত শিক্ষকের কাছে গান শিখেছেন প্রিয়ঙ্কা। প্রিয়তার ছোটবেলা থেকে আগ্রহ ছিল গান ও তবলায়। তাঁকে দুটিই শেখানো হয়। পরে দুজন গান ও তবলাচর্চা চালিয়ে গেছেন।