এক গ্রামে ৩৫টি ‘পুষ্টি বাগান’

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় পুষ্টি বাগানের পরিচর্যা করছেন এক গৃহিণী। কামারপুকুর ইউনিয়নের ব্রম্মোত্তর গ্রামে
ছবি : প্রথম আলো

কাঁচা মরিচ থেকে শুরু করে শাকসবজি, সবকিছুর দাম চড়া। তবে সে আঁচ লাগেনি মনোয়ারা বেগমের ঘরে। বরং তাঁরা বাড়ির আঙিনায় লাগানো শাকসবজি খেয়ে ভালোভাবে দিন পার করছেন। সঙ্গে প্রতিবেশীদের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। বাড়তি কিছু থাকলে বাজারেও বিক্রি করছেন।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ব্রম্মোত্তর গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে ৩৫টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহযোগিতায় গ্রামের প্রত্যেকটি পরিবার দেড় শতক জমিতে গড়ে তুলেছে সবজির এ বাগান।

এ বাগান পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছে বলে এর নাম রাখা হয়েছে পুষ্টি বাগান। সুবিধাভোগীরা বলেন, বাড়ির আঙিনায় যেখানে ছিল আবর্জনার স্তূপ, সে উঠান এখন সবুজ গাছে ভরা। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পথ খুলেছে বাড়তি আয়ের।

গতকাল শনিবার সকালে গ্রামটির ফুতুপাড়া, দেওয়ানীপাড়া, নতুনহাট, ব্রম্মোত্তর ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে লাগানো গাছে ধরেছে নানা রকম সবজি। কৃষক ফজলুর হকের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম দেড় শতক জমিতে আবাদ করেছেন পেঁপে, করলা, ঢ্যাঁড়স, লালশাক, পাটশাক, কাঁচা মরিচের।

আর বস্তায় আবাদ করেছেন আদা। তিনি বলেন, এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) মোমিনুল মোস্তফা জামানের পরামর্শে এ বাগান করেছেন। কোদাল দিয়ে মাটি কেটে চাষ উপযোগী করার পর পাঁচটি বেড বানানো হয়। প্রতিটি বেড এক মিটার চওড়া। মাঝখানে এক ফুট নালা। যাতে পানিসেচ দেওয়া হয়। গত জানুয়ারি মাসে বাগান করেছেন। এর মধ্যে তিনবার ফলন পেয়েছেন।

জহির উদ্দিনের স্ত্রী জোহরা বেগম বলেন, ‘আমার বাগানে এখন আছে ঢ্যাঁড়স, বরবটি, করলা, ঝিঙে, ধুন্দুল ও মরিচ। সামান্য জায়গায় কত ফসল, না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ছয় মাস ধরে আমরা কোনো সবজি কিনে খাইনি। বাগান থেকে যা পাই তা–ই অনেক। শুধু তা–ই নয়, এক হাজার টাকার সবজিও বিক্রি করেছি আমি।’

ব্রম্মোত্তর গ্রামের পারিবারিক পুষ্টি বাগানের দেখভাল করছেন কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোমিনুল মোস্তফা জামান। তিনি বলেন, ব্রম্মোত্তর গ্রামটিতে এখন আর পতিত জমি নেই।

এসব বাগানে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার হয় না। মুরগির বিষ্ঠা, বায়োগ্যাসের বর্জ্য, গৃহস্থালি আবর্জনা দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে জমিগুলোতে প্রয়োগ করা হচ্ছে। আর কীটনাশক হিসেবে তামাকগুঁড়া (গুল) ব্যবহার করা হচ্ছে। পুষ্টি বাগানের ফসল সম্পূর্ণ নিরাপদ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মমতা সাহা বলেন, উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৬০০ পুষ্টি বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে ২৮৬টি বাগানে উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাগানগুলো ঘুরে দেখে তাঁদের কাজের প্রশংসা করেছেন।