বগুড়া ছাত্রলীগ
জীবনবৃত্তান্তেই আটকে আছে কমিটি গঠন
শীর্ষ চার পদে নিজেদের অনুসারীদের বসাতে জোর তদবির করছেন জেলা আওয়ামী লীগের তিন নেতা। এক কেন্দ্রীয় নেতার প্রভাবও আছে।
২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি। এর মেয়াদ ১ বছর।
২০১৬ সালে সম্মেলন ছাড়াই আজিজুল হক কলেজ শাখার আংশিক কমিটি হয়।
বগুড়া জেলা ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করতে ছয় মাস আগে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। চার শীর্ষ পদ পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ৫৬ নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো ঘোষণা করা হয়নি সেই কমিটি।
নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী তিন নেতার অভিযোগ, জেলা শাখা এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখার শীর্ষ চার পদে নিজেদের অনুসারীদের বসাতে জোর তদবির করছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ তিন নেতা। এ ছাড়া এক কেন্দ্রীয় নেতারও প্রভাব আছে জেলা ছাত্রলীগে। সব নেতাকে সন্তুষ্ট করতে না পারায় আটকে আছে ছাত্রলীগের কমিটি।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৭ মে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন এবং ১২ মে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের জেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর। তবে সাত বছর পরও সম্মেলন না হওয়ায় প্রায় স্থবির সাংগঠনিক কার্যক্রম। এ বছরের ২১ জানুয়ারি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। পরে ২ ফেব্রুয়ারি শহীদ টিটু মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ৫৬ নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। সেখানে দ্রুত কমিটি গঠনের আশ্বাসও দেন নেতারা। এবার কাউন্সিল হবে না। কেন্দ্র থেকে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হবে। পরে নানা কারণে কমিটি গঠনের উদ্যোগ আটকে যায়।
সভাপতি পদপ্রত্যাশী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুকুল ইসলাম বলেন, জেলা কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। গতি ফিরিয়ে আনতে ত্যাগী ও যোগ্যদের নিয়ে পরিচ্ছন্ন জেলা কমিটি করা দরকার। তিনি আরও বলেন, ‘কলেজজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছি। ভালো পদ-পদবি পাব, সেই আশায় আছি। সুযোগ পেয়েও চাকরিতে যোগ দিইনি, বিয়েও করিনি। অথচ কমিটি হবে, হচ্ছে করে বুড়ো করে দিল ছাত্রলীগ।’
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা ছাত্রলীগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে নেতাদের সুপারিশ নিয়ে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ করছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আরিফুল আলম, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথিলেস কুমার প্রসাদ ও সাজ্জাদ আলম পারভেজ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ ও মিনহাজুল ইসলাম, সাবেক প্রচার সম্পাদক মুকুল ইসলাম, সাবেক গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সজীব সাহা, পৌর ছাত্রলীগের নেতা সাধারণ জাহিদ হাসান, সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মাহফুজার রহমান, তৌহিদ আহমেদ ও নোমান আল সাব্বির।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান বলেন, ছাত্রলীগে পদ দেওয়ার বিষয়ে তিনি কারও জন্য কোথাও কোনো প্রকার সুপারিশ করেননি। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সুপারিশের কারণে কমিটি গঠন আটকে আছে—এ অভিযোগ সত্য নয়।
অন্যদিকে ২০১৫ সালে বেনজীর আহমেদকে সভাপতি এবং আসলাম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখায় আংশিক কমিটি হয়। এক বছর পর ২০১৬ সালে সম্মেলন ছাড়াই দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে কে এম মোজাম্মেল হোসেনকে সভাপতি এবং আবদুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। গত বছর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ তাকবীর ইসলাম খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবদুর রউফকে প্রধান আসামি করা হয়। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। সেই থেকে শুধু সভাপতি দিয়ে চলছে এ শাখা। মোজাম্মেল বিয়ে করেছেন এবং তাঁর ছাত্রত্বও শেষ।
মোজাম্মেল হোসেন বলেন, অর্থনীতি বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। কিন্তু মানোন্নয়নের জন্য আবারও একই কলেজ থেকে পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই হিসেবে এখনো ছাত্রত্ব শেষ হয়নি। তবে বিয়ে করার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
জেলা ছাত্রলীগ পুনর্গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা সম্পাদক শেখ সাঈদ আনোয়ার বলেন, ‘আশা করছি সেপ্টেম্বরেই নতুন কমিটি গঠন হবে। কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে।’