হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ কার্যালয় ঘিরে শোনা যাবে না আর পাখির কিচিরমিচির শব্দ
হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের কার্যালয়ের চারপাশ আকাশমণি, শিলকড়ই, মেহগনি, গামারিসহ নানা জাতের গাছ আছে। বিকেল হলেই সবুজ গাছগাছালি ঘিরে পানকৌড়ি, শালিক, কোকিল, চড়ুইসহ নানা প্রজাতির পাখির মিলনমেলা বসে। পাখির কলরব ও কিচিরমিচির শব্দে মুখর থাকে জেলা পরিষদ কার্যালয় ও আশপাশ। কিন্তু এমন সুন্দর পরিবেশ আর থাকছে না। এসব গাছ কেটে সেখানে দোকানপাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে গাছ কাটার জন্য দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। এখন শুধু গাছগুলো কাটার অপেক্ষা।
গাছ কাটার বিপক্ষে হবিগঞ্জ শহরবাসী ও পরিবেশবাদীরা। তাঁরা বলছেন, গাছগুলো কেটে দোকানঘর তুলে ভাড়া দেবে কর্তৃপক্ষ। এসব গাছ কাটা হলে পরিবেশের ভারসাম্য ও সৌন্দর্য নষ্ট হবে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে, বাস্তুসংস্থান ভেঙে পড়বে। পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, অণুজীব আশ্রয়স্থল হারাবে। ফলে এসব গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।
হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী ফিরোজ শেখ বলেন, জেলা পরিষদ ঘিরে এসব গাছ বহু পুরোনো ও বড় আকারের, যা শহরের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। কেন এসব গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হলো, তা এলাকাবাসীর কাছে পরিষ্কার নয়। চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন সিদ্ধান্ত।
জেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ কার্যালয়ের চারপাশের সীমানা ঘেঁষে বেড়ে ওঠা আকাশমণি, শিলকড়ই, মেহগনি, গামারি, রেইনট্রিসহ দেড় শতাধিক গাছ আছে। অধিকাংশ গাছের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এসব গাছের মধ্য থেকে ৫৬টি গাছ জেলা পরিষদ কার্যালয়ের ভেতরে। ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে আছে ১২টি গাছ। বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সামনে জেলা পরিষদের মিলনায়তনের পাশে ৯টি গাছসহ মোট ৭৭টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের অফিসের পূর্ব পাশের দেয়াল ডিঙিয়ে (হাসপাতালের প্রবেশমুখের পাশে) বাইরের লোকজন ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছেন। যে কারণে ওই দেয়ালের পাশ ঘেঁষা গাছগুলো কেটে এখানে দোকানঘর নির্মাণ করা হবে। তাঁরা সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে জেলা পরিষদ কার্যালয়ের ওই ৫৬টিসহ মোট ৭৭টি গাছ কাটার দরপত্র আহ্বান করেছেন। দুই-এক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাকে এসব গাছ কাটার অনুমোদন দেওয়া হবে। নূরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা যত গাছ কাটব, সেই পরিমাণ ফলদ গাছ একই স্থানে রোপণ করব। আশা করি তাতে পরিবেশের সৌন্দর্য বজায় থাকবে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, গাছগুলোতে অসংখ্য পাখি বসে প্রতিদিন। গাছগুলো কাটা হলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে, বাস্তুসংস্থান ভেঙে পড়বে। পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, অণুজীব তাদের আশ্রয়স্থল হারাবে। এলাকায় গাছগুলোর মাধ্যমে যে পরিবেশগত ভারসাম্য সৃষ্টি হয়েছে, গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে এ ভারসাম্য নষ্ট হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গাছ। তাই গাছগুলো না কেটে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাছগুলোর বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। এসব গাছ অক্সিজেন ত্যাগ করে বলেই আমরা প্রাণিকুল বেঁচে আছি।’