দৌলতদিয়ায় ধরা পড়ল সাড়ে ২৬ কেজির বাগাড়, ৪০ হাজারে বিক্রি

দৌলতদিয়ার পদ্মা নদীতে শনিবার দুপুরে জেলেদের জালে সাড়ে ২৬ কেজি ওজনের এই বাগাড় মাছটি ধরা পড়ে। আজ শনিবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে সাড়ে ২৬ কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছ ধরা পড়েছে। আজ শনিবার দুপুরে এক জেলের জালে ধরা পড়া বাগাড়টি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে প্রায় ৩৭ হাজার টাকায় কিনে নেন স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ী পরে ঢাকার এক ব্যক্তির কাছে মাছটি প্রায় ৩ হাজার টাকা লাভে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

স্থানীয় জেলেরা জানান, আজ বেলা ১১টার দিকে ফেরিঘাটের কাছে বাহিরচর দৌলতদিয়া কলার বাগান এলাকায় নদীতে জাল ফেলেন স্থানীয় জেলে নিমাই হালদার। কিছুক্ষণ পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলেরা জাল গুটিয়ে নৌকায় তুলতেই দেখেন বড় এক বাগাড়। তাঁরা মাছটি পাওয়ার পর বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। এ সময় স্থানীয় আনু খাঁর আড়তে নিলামে তোলা হলে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লা ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে কিনে নেন বাগাড়টি।

দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মো. চান্দু মোল্লা বলেন, ‘আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৬ নম্বর ফেরিঘাটে আনু খাঁর আড়তে বড় ওই বাগাড় মাছ বিক্রির জন্য আনা হয়। এ সময় ওজন দিয়ে দেখা যায়, বাগাড়টির ওজন ২৬ কেজি ৭০০ গ্রাম। পরে নিলামে তোলা হলে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে মোট ৩৭ হাজার ৩৮০ টাকায় কিনে নিই। পরে মুঠোফোনে ঢাকার এক পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রতি কেজি ১০০ টাকা লাভে মোট ৪০ হাজার টাকায় ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে বিক্রি করে দিই। বিকেলেই গাড়িতে বাগাড়টি পাঠানো হয়েছে।’

জানা গেছে, বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর তফসিল (২) অনুযায়ী, বাগাড় মাছ একটি সংরক্ষিত বন্য প্রাণী। বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করে সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বাগাড় মাছ তফসিলভুক্ত সংরক্ষিত বন্য প্রাণী। আইন অনুযায়ী, এই মাছ শিকার, বেচাকেনা দণ্ডনীয় অপরাধ। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় মাছ মহাবিপন্ন প্রাণী। তবে এ বিষয়ের সঙ্গে একমত নন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান বলেন, বড় বাগাড় শিকার, বেচাকেনা বা খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধা–নিষেধ নেই। পদ্মা নদীর মোহনায় পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় অনেক প্রজাতির বড় মাছ আছে। গভীরতা বেশি থাকলে এসব মাছ আরও উজানে যেতে পারত। বাগাড়সহ যেকোনো বড় মাছ শিকার এ অঞ্চলের জেলেদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ, জেলেরা মূলত নদীর ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন।

এর আগে ৯ জুন দৌলতদিয়ার চর করনেশনা এলাকায় পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনায় প্রায় সাড়ে ২৭ কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছ ধরা পড়ে।

এ ছাড়া ১৩ জানুয়ারি গোয়ালন্দের পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনায় আরেকটি প্রায় সাড়ে ২৭ কেজি ওজনের বাগাড় ধরা পড়েছিল। তার আগে ২৫ ডিসেম্বর ভোরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গুদারবাজার এলাকার পদ্মায় স্থানীয় জেলে নুরাল বিশ্বাসের জালেও ২৭ কেজি ওজনের আরেকটি বাগাড় মাছ ধরা পড়েছিল।